হে আমার চোখ! অশ্রু বিসর্জন করে শোক প্ৰকাশ কর বি র-ই-মাউনার ঘটনায় নিহত
সাহাবীদের জন্যে ৷ অশ্রু ঝরাও প্রবল বেগে, একটুও কমতি করোনা ৷
অশ্রু বিসর্জন দাও রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর প্রেরিত অশ্বারোহী বাক্ট্রলীর জন্যে যারা ভোরবেলায়
শত্রুপক্ষের মুখোমুখি হয়েছিলেন ৷ আর তখনই তাদের জন্যে নিংারিত মৃত্যু তাদেরকে পেয়ে
বসে ৷
এমন এক সম্প্রদায়ের কারণে তাদের উপর মৃত্যু নেমে আ স যারাসম্পাদিত চুক্তিকে ওয়াদা
তলের মাধ্যমে বিশ্বাস ঘা৩ কতায় পরিণত করেছে ৷
আহ্ ৷ আমার দুঃখ হয়, যুনযিরের জন্যে ৷ তিনি দলের (নতৃতৃ গ্রহণ করেছিলেন এবং ভৈধর্যের
সাথে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন ৷
আমার দুঃখ ওই দিন সকা ল যেলার ঘটনার জন্যে ৷ তিনি আ ক্রাম্ভ হয়েছিলেন ৷ তিনি সুদর্শন,
শ্রদ্ধাভা জন এবং আমর (রা) এর অম্ভরঙ্গ ৷
বনু নাযীরের যুদ্ধ
এ প্ৰসংগে সুরা হাশর নাযিল হয় ৷
সহীহ্ বুখারীতে ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এই সুরাকে সুরা বনু নাযীর নামে
আখ্যায়িত করতেন ৷ বুখারী (বা) যুহরী সুত্রে উরওয়া থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন যে ,
বদর যুদ্ধের ছয় মাস পরে এবং উহুদ যুদ্ধের পুর্বে বনুনাযীর যুদ্ধ অনুষ্ঠিত ৩হয় ৷ ইবন আবু হাতিম
তারাতাফসীর গ্রন্থে৩ার পিতা যুহরী থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ হাম্বল ইবন ইসহাক
যুহরী থেকে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে ৷ যুহরী বলেছেন যে, ২য় হিজরীর ১ ৭ই রমযান বদর যুদ্ধ
সংঘটিত হয় ৷ তারপর বনুনাযীর যুদ্ধ ৷ তারপর তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত
হয় ৷ তারপর ৪র্থ হিজরীর শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৷ বায়হাকী (র) বলেন যে ,
যুহরী বলতেন, বনুনাযীর যুদ্ধ সংঘটিত হয় উহুদ যুদ্ধের পুর্বে ৷ অপর একদল ঐতিহাসিক বলেন
যে, বনু নাযীর যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় উহু দ যুদ্ধের এবং বির-ই মাউনা অভিযানের পর ৷
আমি বলি, ঐতিহাসিক ইবন ইসহাকতাই উল্লেখ করেছেন যে, বনু নাযীর যুদ্ধ সংঘটিত
হয়েছে উহুদ যুদ্ধ ও ৰি র-ই-মাউনা অভিযানের পর ৷ করণ, বি র-ই মাউনার ঘটনা, সেখান
থেকে আমর ইবন উমাইয়া দিমারীর পালিয়ে আসা, আমর গোত্রের দুজন লোককে হত্যা করা
যাদের সাথে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিরাপত্তা চুক্তি ছিল অথচ আমর ইবন উমাইয়ার তা জানা ছিল
না, তাই রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন “আমাকে তো ওদের রক্তপণ পরিশোধ করতে হবে” ৷ এ
সব ঘটনা উল্লেখ করার পর ইবন ইসহাক বলেছেন যে, এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) বনুনাযীর গোত্রের
নিকট গেলেন ৷ তীর উদ্দেশ্য ছিল আমব ইবন উমাইয়া নিরাপত্তা চুক্তিপ্রাপ্ত আমির গোত্রের যে
দু’জন লোককে হত্যা করেছে তাদের রক্তপণ পরিশোধে বনু নাযীর ণ্:গাত্রের সহায়তা কামনা
করা ৷ বনু নাযীর ও বনু আমির গোত্রের মধ্যে পরস্পর মৈত্রীও নিরাপত্তা চুক্তি ছিল ৷ রাসুলুল্লাহ্
(না)-কে তারা আশ্বস্ত করল যে, আমরা ওই রক্তপণ পরিশোধে আপনাকে সাহায্য করব ৷ এরপর
তারা একাম্ভে মিলিত হল, এবং নিজেরা পরামর্শ করল যে, মুহাম্মাদ (সা ) কে হত্যা করার এমন
সুবর্ণ সুযোগ আর আমরা পাব না ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তখন তাদের একটি ঘরের দেয়ালের পাশে
বসা ছিলেন ৷ তারা বলল, কে আছে যে, ছাদে উঠে ওখান থেকে একটি পাথর ফেলে দিয়ে
মুহাম্মাদকে হত্যা করে আমাদেরকে তীর হাত থেকে নিকৃতি দেবে :ণ্ আমর ইবন জাহ্হাশ এগিয়ে
এসে বলল, আমি এ জন্যে প্রস্তুত আছ ৷ সে মতে পাথর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে সে ছাদে উঠে ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) তখনও সেখানে একদল সাহাবীসহ বসা ছিলেন ৷ তাদের মধ্যে ছিলেন হযরত আবু
বকর (রা) উমর (রা) এবং আলী (রা) ৷ ওদের দুরভিসন্ধি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট
আসমানী সংবাদ এসে যায় ৷ তিনি কাউকে কিছু না বলে উঠে পড়েন এবং মদীনায় উদ্দেশ্যে যাত্রা
করেন ৷ দীর্ঘক্ষণ ঘটনাস্থলে ফিরে না আসার সাহাবীগণ তার খোজে বের হয়, মদীনায় দিক থেকে
আগত এক লোককে দেখে তারা রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর কথা তাকে জিজ্ঞেস করে ৷ যে ব্যক্তি
বলেছিল যে, আমি তো র্তাকে মদীনায় প্রবেশ করতে দেখেছি ৷ এ সংবাদ পেয়ে সাহাবীগণ
সকলে মদীনায় ফিরে এলেন এবং রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট সমবেত হলেন ৷ তিনি ইয়াহুদীদের
বিশ্বাসঘাতকতার কথা তাদেরকে অবহিত করলেন ৷
ওয়াকিদী বলেন, এ ঘটনার পর বাসুলুল্লাহ্ (সা) মুহাম্মাদ ইবন যাসলামড়াকে এ বার্তাসহ বনু
নাযীর গোত্রের নিকট প্রেরণ করেন যে, তারা যেন তার নিকটস্থ এলাকা এবং র্তাব শহর ছেড়ে
চলে যায় ৷ অন্যদিকে মুনাফিকরা ওদের নিকট এ সংবাদ পাঠায় যে, তারা যেন কােনক্রমেই ওই
স্থান ত্যাগ না করে ৷ ওখানে অবস্থান করার জন্যে তারা ইয়াহুদীদেরকে উৎসাহিত করে , এবং
তাদেরকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দেয় ৷ মুনাফিকদের প্ৰরোচণার কারণে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায় ৷
ইয়াহুদী নেতা হুয়াই ইবন আখতার আত্ম-অহমিকায় স্ফীত হয়ে উঠে ৷ তারা রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর
নিকট খবর পাঠায় যে, তারা ওই স্থান ছেড়ে যাবে না ৷ তারা এও জানায় যে, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
সাথে তাদের সম্পাদিত চুক্তি তারা প্রত্যাহার করেছে ৷
এ অবস্থায় তিনি তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্যে ঘুসলমানদেরকে নির্দেশ দেন ৷
ওয়াকিদী বলেন, মুসলিম বাহিনী বনুনাযীর গোত্রকে একাধারে পনের দিন অবরুদ্ধ করে রাখেন ৷
ইবন ইসহাক বলেন, বাসুলুল্লাহ্ (সা) বনুনাযীর গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ এবং যুদ্ধ
যাত্রার নির্দেশ দিলেন ৷ ইবন হিশাম বলেন, ওই সময় রাসুলুল্লাহ্ (সা) (আবদৃল্লাহ্) ইবন উম্মি
যাকতুম (রা) কে মদীনায় তার স্থলাভিষিক্ত করে যান ৷ এ ঘটনা ঘটেছিল রবীউল আওয়াল মাসে ৷
ইবন ইসহাক বলেন, মুসলিম বাহিনী যাত্রা শুরু করে ওদের নিকট পৌছেন ৷ র্তারা ওদেরকে
ছয়দিন অবরুদ্ধ করে রাখেন ৷ এ সময়ে মদ পান হারাম হওয়ার বিধান নাযিল হয় ৷ ইয়াহুদীরা
তাদের সুরক্ষিত দৃর্গে আশ্রয় নেয় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) মুসলিম বাহিনীকে ওদের থেজুর বাগান কেটে
ফেলার এবং তা পুড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয় ৷ এ সব দেখে ওরা দুর্গের ভেতর থেকে ডেকে
ডেকে বলে, হে মুহাম্মাদ (সা) ! আপনি (তা ফাসাদ ও ৰিশৃৎখল৷ সৃষ্টিতে ধারণ করেন, যে ব্যক্তি
তা করে তাকে দোষারোপ করেন এখন দেখি আপনিই খেজুর বাগান কেটে ফেলছেন এবং তা
পুড়িয়ে দিচ্ছেন, ব্যাপার কী ?
বর্ণনাকাৰী বলেন, বনুআওফ গোত্রের আবদুল্লাহ ইবন উবাই, ওয়াদিআহ, মালিক, সুওয়াইদ
ও দাইস সহ একদল লোক ইয়াহুদীদের নিকট এ বলে সংবাদ পাঠায় যে, তারা যেন ওখানে থেকে
যায় ৷ অন্যত্র না যায় ৷ নিজ নিজ বাসন্থানে থেকে আত্মরক্ষ৷ করে ৷ তারা এ-ও বলে যে, আমরা
তােমাদেরকে অসহায় অবস্থায় ফেলে রাখব না ৷ তোমরা যদি যুদ্ধের মুখোমুখি হও তবে আমরা
তোমাদের সাথী হয়ে মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব ৷ ভোচ্;শ্দেয় যদি বহিষ্কার করা হয় তবে
আমরাও তোমাদের সাথে এ অঞ্চল ত্যাগ করে বেরিয়ে যাব ৷ অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকাকালে
ইয়াহুদীপণ প্রতিশ্রুত সাহায্যের অপেক্ষায় ছিল ৷ কিন্তু মুনাফিকরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে
আসেননি ৷ আল্লাহ্৩ তা আল৷ ইয়াহুদীদের অন্তরে ভীতিরও সঞ্চার করে দিলেন ৷ তারা রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর নিকট দেশ ত্যাগের সুয়োগদানের অনুরোধ জানাল এবং এ আবেদন করল যেন
তাদেরকে প্রাণে মার৷ না হয় ৷ তারা প্রস্তাব পেশ করে যে, যাওয়ার সময় তারা উটের পিঠে যতটুকু
মালামাল বহন করা যায় শুধু ততর্টুকু নিয়ে যাবে, তবে কোন অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে যাবে না ৷
আওফী বর্ণনা করেছেন ইবন আব্বাস (রা) থেকে যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) ওদের প্রতি
তিনজনকে একটি করে উট বরাদ্দ করেছিলেন যে, ওরা পালাক্রমে ওই উঠের পিঠে মাল বহন
করবে ৷ বায়হাকী এটি বর্ণনা করেছেন ৷ ইয়াকুব ইবন মুহাম্মাদ — মুহাম্মাদ ইবন মাসলামা
থেকে বর্ণিত যে, রড়াসুলুল্লাহ্ (সা) তাকে বনুনাযীর গোত্রের নিকট পাঠিয়েছিলেন এ নির্দেশ দিয়ে
যে, ওরা যেন তিন দিনের মধ্যে দেশত্যাগ করে ৷ বায়হাকী প্রমুখ উল্লেখ করেছেন যে, ওদের কিছু
মেয়াদী ঋণ বিভিন্ন জনের কাছে পা ওন৷ ছিল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেন, ওগুলো ছেড়ে দাও এবং
তা ৷ ৩াড়ি দেশতাপ কর ৷ অবশ্য এই বর্ণনা টির বিশুদ্ধত৷ প্ৰশ্ন৷ ৷ডীত নয় ৷ আল্লাহ্ইতা ৷ল জা নেন ৷
ড়ইবন ইসহাক বলেন, উটের পিঠে যে পরিমাণ বহন করা সম্ভব ছিল ওই পরিমাণ মালামাল
নিয়েই তার৷ চলে যায় ৷ তাদের কেউ কেউ নিজ গৃহের দরজার চৌকাঠ ভেঙ্গে উটের পিঠে তুলে
নেয় ৷ এরপর তাদের কিছু সং ×খ্যক খায়বারে এবং কিছু সং ×খ্যক সিরিয়ায় চলে যায় ৷ যারা খায়বারে
গিয়েছিল তাদের মধ্যে ছিল নেত তৃন্থানীয় ব্যক্তি সালাম ইবন আবুল হুকায়ক কিনানা ইবন রাবী
ইবন আবু হুকায়ক, হ্য় ই ইবন আখতার প্রমুখ ৷ এরা খায়বরে গিয়ে পৌছলে সেখানকার
অধিবাসীরা এদেরকে নেতারুপে বরণ করে নেয় ৷ আবদুল্লাহ ইবন আবু বকর বলেছেন
যে, সেখানকার মহিলা, শিশু সহ সর্বস্তরের লোকজন হাতি-ঘোড়া, (ঢাল-তবলা বাশী-গায়িকা
সহকারে ওদেরকে অভ্যর্থ্যন৷ জানায় ৷ গৌরব ও অহংকার, আনন্দ ও খুশীতে ওরা সদ্যাগত ইয়াহ্রদী
নেতাদেরকে যেভাবে সম্বর্ধন৷ জানিয়েছিল সে যুগে কোন ব্যক্তি ও গোত্রের প্রতি তেমন সম্বর্ধনা
দেয়৷ হয়নি ৷ বংনািকারী বলেন, ওরা নিজেদের ধন-সম্পদ তথা খেজুর বাগান ও ফসলাদি
রাসুলুল্লাহ (সা ) এর হাতে ছেড়ে যায় ৷ সুতরাং এটি ছিল তার এক ম্ভই নজ সম্পদ ৷ নিজ
ইচ্ছামত তিনি তা ব্যয় করার অধিকারী ছিলেন ৷ তিনি ওই ধন সম্পদ প্রথম স্তরের মুহাজিরদের
মধ্যে বন্টন করে দেন ৷ আনসারদেরকে এ যাত্রার কিছু দেননি ৷ তবে সাহ্ল ইবন হুনায়ফ এবং
আবু দুজ৷ ন৷ আনসাবী ছিলেন ব্যতিক্রম ৷৩ তারা দুজনে নিজনিজ অভাব ও দ্য ৷রিদ্রোর কথা রাসুলুল্লাহ্
(সা) কে ইতিপুর্বে জা ৷নিয়েছিলেন ৷ সে প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ্ (সা)ত তাদেরকে এ থেকে কিছুটা দান
করেন ৷ (কেউ কেউ এ দুজনের সাথে হারিছ ইবন সাম্মাহ এর নামও অন্তর্ভুক্ত করেছেন ৷ এটি
বংনাি করেছেন সুহায়লী) ৷
ইবন ইসহাক বলেন, বনুনাযীর গোত্রের দুজন লোক ব্যতীত কেউই ইসলাম গ্রহণ করেনি ৷
ইসলাম গ্রহণক৷ ৷রী দু’জন হলেন ইয়ামীন ইবন উমায়র ইবন বার এবং ন্মবুসাদ ইবন ওয়াহব ৷
ইয়ামীন হলেন আমর ইবন জাহ্হাদ্বশর চাচাত ভাই ৷৩ তারা নিজ নিজ ধন সম্পদ নিজ দখলে
রেখেছিলেন ৷
ইবন ইসহাক বলেন, ইয়ামীনের পরিবারের জনৈক ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছে যে , রাসুলুল্লাহ
(সা) ইয়ামীনকে বলেছিলেন তোমার চাচাত ভাই আমর ইবন জাহ্হাশের পক্ষ থেকে আমি
কেমন কষ্টের মুখোমুখি হচ্ছি এবং আমার সাথে যে কী আচরণ করছে তা কি তুমি দেখছ না ?
ইয়ামীন জনৈক লোককে কিন্তু পা ৷বিশ্রমিকের বিনিময়ে আমর ইবন জাহহাশকে হত্যা করার জন্যে
নিযুক্ত করেন ৷ যে ঐ অভিশপ্ত ব্যক্তিটিকে হত্যা করল ৷
ইবন ইসহাক বলেন বনু নাষীর পােত্রকে উপলক্ষ করে আল্লাহ তাআলা পুর্ণ সুরা হাশর
নাযিল করেন ৷ ওদের বিরুদ্ধে আল্লাহ্৩ তা আল৷ কিভাবে প্ৰতিশোধ নিলেন কেমন শাস্তি দিলেন
রাসুলুল্লাহ্ (সা )-কে কেমন করে বিজয়ী করলেন এবং তিনি ওদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিলেনত
সবই আল্লাহ তাআল৷ উক্ত সুরাতে ৩উল্লেখ করেছেন ৷ এরপর ইবন ইসহাক উক্ত সুরাবত তাফসীর
করেছেন ৷ আমরা তাফসীর গ্রন্থে ওই সুরার বিস্তারিত ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছি ৷
বস্তুতঃ আল্লাহ তাআলা বলেন
৷ মণ্ডলী ও পৃথির্বীর্তে যা কিছু আছে সবগুলোই আল্লাহ
তাআলার পর্বিত্রতা ও মহিম৷ ঘোষণা করে ৷ তিনি পরাক্রমশালী, প্ৰজ্ঞাময় ৷ তিনিই কিতাবীদের
মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে প্রথম সমাবেশেই তাদের আবাসভুমি হতে বিতাড়িত করেছেন ৷
তোমরা কল্পনাও করনি যে, ওরা নির্বাসিত হবে এবং ওরা মনে করেছিল ওদের দুণ্ডে র্ভদ্য দৃর্গগুলো
আল্লাহর শাস্তি থেকে ওদেরকে রক্ষা করবে ৷ কিন্তু আল্লাহর শাস্তি এমন একদিক হতে আসল যা
ছিল ওদের ধারণাতীত এবং তাদের অম্ভরে তা ত্রাস সৃষ্টি করল ৷ ওরা ধ্বংস করে ফেলল
নিজেদের বা ৷ড়ীঘর নিজেদের হাতে এমনকি যুমিনদের হা তেও ৷ অতএব হে চক্ষুষ্ম ৷নরা ! তোমরা
উপদেশ ৷গ্রহণ কর ৷ আল্লাহ ওদের নির্বাসনের সিদ্ধান্ত না নিলে ওদেরকে পৃথিবীতে অন্য শাস্তি
দিতেন ৷ পরকালে ওদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি ৷ তা এ জন্যে যে, ওরা আল্লাহ ও তার
রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল ৷ এবং কেউ আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করলে আল্লাহ তো শাস্তি দ৷ নে
কঠোর ৷ তোমরা যে খেজুর বৃক্ষগুলাে কর্তন করেছ এবং যেগুলো কাণ্ডের উপর স্থির রেখেছত
তা আল্লাহরই অনুমতিক্রমে; তা এজন্যে যে, আল্লাহ পাপাচ৷ ৷রীদের লাঞ্ছিত করবেন ৷ উক্ত আয়াত
সমুহে মহান আল্লাহ নিজে নিজের পবিত্রতা ও মহিমার কথা জানিয়ে দিয়েছেন ৷ তিনি ঘোষণা
করেছেন যে, উর্ধ্বড়াকাশ ও পাতালে অবস্থানকারী তথা সকল সৃষ্টিকুল তার পবিত্রতা ও মহিমা
ঘোষণা করে ৷ তিনি অপ্রতিরােধ্য, পরাক্রমশালী ৷ তিনি স্ব-রক্ষিত ৷ তার সম্মান ও মর্যাদা বিনষ্টের
কথা কেউ কল্পনড়াও করতে পারে না ৷ তিনি যা সৃষ্টি করেছেন এবং যা বিধি বিধান জারী করেছেন
তার সর্বক্ষেত্রেই তিনি প্রজ্ঞার প্রকাশ ঘটিয়েছেন ৷ তিনি প্রজ্ঞামর ৷ তার প্রজ্ঞার অনন্য উদাহরণ
যে, তিনি রাসুলুল্লাহ্ (মা) ও ঈমানদার বান্দাদেরকে তাদের শত্রু ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে বিজয়
দান করেছেন ৷ ইয়াহ্রদীরা তো আল্লাহ্ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল ৷ তারা রাসুলুল্লাহ্
(না) ও তার শরীআত প্রত্যাখ্যান করেছিল ৷ ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ণ্’ঘার্ষণার যে প্রেক্ষাপট সেটি
সৃষ্টিতেও মহান আল্লাহ্র হিকমতের পরিচয় পাওয়া যায় ৷ মহান অল্লোহ্র হিকমত ও প্রজ্ঞার
প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ্ (সা) ও তার সাথিগণ ইয়ড়াহুদীদেরকে অন্ন্ত্ত্বরুদ্ধ করে রাখেন ৷ সেখানে
আল্লাহর পক্ষ থেকে ভয়-ভীতি জারী করে দেয়া হয় ৷ বস্তুতঃ সৃ: লুল্লাহ্ (সা) কে আল্লাহ তা আলা
এক মাসের অতিক্রমযোগ্য দুরতু থেকে ডীতি সৃষ্টির ক্ষমতা দিয়ে সাহায্য করেছেন ৷ এতদ্সবুত্ত্বও
ঘটনস্থেলে গিয়ে রাসৃলুল্লাহ্ (সা) সশরীরে এবং সাহাবীগণকে নিয়ে ওদেরকে একাধারে ছয়দিন
অবরোধ করে রাখেন ৷ এর ফলে তাদের পক্ষ থেকে আক্রমণ আমার আশংকা পুরোপুরিই দুর
হয়ে গেল ৷ তারা উপড়ায়াম্ভর না দেখে সন্ধি সম্পাদনে বাধ্য হল জান বাচানাের জন্যে ৷ তারা চুক্তি
করল যে, এই শর্তে তারা প্রড়াণে রক্ষা পারে যে, যাবার সময় শুধু ততটুকু মালামালই নিয়ে
যাবে যতটুকু উটের পিঠে করে নেয়া সম্ভব ৷ তবে কোন অস্ত্র শস্ত্র তারা নেবে না ৷ এই চুক্তি
তাদের জন্যে অবমাননত্ত্বকর ও লাঞ্চুনাদায়ক বটে ৷ এরপর তারা নিজেদের হাতে এবং মুমিনদের
হাতে নিজেদের ঘর-রাড়ী ভেঙ্গে ফেলা শুরু করে ৷ সুতরাং হে দুরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ ! তোমরা
শিক্ষা গ্রহণ কর ৷
এরপর আল্লাহ্ তাআলা উল্লেখ করেছেন যে, ওরা যদি নিবাসনে না যেত অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর প্রতিবেশীতৃ ছেড়ে মদীনা ছেড়ে চলে না যেত তবে তারচেয়ে কঠিন শাস্তি অর্থাৎ
দুনিয়াতে খুন ও হত্যার শাস্তি তাদেরকে ভোগ করতে হত ৷ পরকালীন শাস্তি নির্ধারিত যন্ত্রণাদায়ক
আমার তো থাকবেই ৷
এরপর আল্লাহ্ তাঅড়ালা ওদের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দেয়া এবং কতক খেজুর বৃক্ষ অক্ষত
রাখার বিষয় উল্লেখ করেছেন ৷ তিনি বলেছেন যে, উৎকৃষ্ট খেজুর বৃক্ষের যেগুলো তোমরা কেটে
ফেলেছ এবং যেগুলো দন্ডায়মান রেখেছ তার সবইতাে আল্লাহ্র অনুমোদনক্রমে হয়েছে ৷ আল্লাহ্
তাআলা ভাগ্য নিধরিণ এবং নির্দেশ প্রণয়নের মাধ্যমে এ কাজ করার অনুমতি প্রদান করেছেন ৷
তাই এ কাজে তোমাদের কোন দোষ নেই ৷ এ ক্ষেত্রে তোমরা যা করেছ তা ফাসাদ বা
বিশৃৎখলার পর্যায়ে পড়ে না ৷ দুষ্ট লোকেরা অবশ্য এটাকে ফাসাদ বলেই গণ্য করে ৷ এটি ছিল
বরং মুসলিম বাহিনীর শক্তির বহিঃপ্রকাশ এবং কাফিরদের লাঞ্চুন৷ ও অবমাননার নিদর্শন স্বরুপ ৷
বুখারী ও মুসলিম দু’জনে কুতায়বা — ইবন উনার (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বনু নাযীর গোত্রের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দিয়েছেন এবং কতগুলো গাছ কেটে
ফেলেছেন ৷ ওই বাগানের নাম ছিল বুয়ায়রা ৷ এ প্রসংগে আল্লাহ্ তাআলা বলেন :
“তোমরা যে খেজুর বৃক্ষগুলাে কেটেছ এবং যেগুলো কাণ্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ তাতাে
আল্লাহ্রই অনুমতিত্রুমে; তা এজন্যে যে, আল্লাহ্ পাপাচারীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন ৷ (৫৯-
হাশব : ৫)
বুখাবী জুওয়াইরিয়া ইবন আসৃমা সুত্রে ইবন উমার (রা) থেকে বংনিা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ্
(সা) বনু নাযীর গোত্রের এবং বুওয়াইরা খেজুর বাগান পুড়িয়ে দেন যা কেটে ফেলেছেন ৷ এ
প্রসৎরু গ হযরত হাসৃসান ইবন ছাবি৩ তার কবিতায় বলেন০ ং
বুওয়াযরা বাগান পুড়ে যাওয়া এবং বৃক্ষ গুলো ছাই হয়ে যাওয়াগুক কবনু লুওয়াই গোত্রের
নেতৃস্থানীয় লোকেরা নিতাম্ভ হাল্ক ল্কাভাবে গ্রহণ করেছে ৷
হযরত হাস্সানের উপরোক্ত কবিতার উত্তরে তৎকালীন কাফির নেতা আবু সুফিয়ান ইবনুল
হারিছ বলেছিল :
আল্লাহ্ তা আলা এই অপকর্ম দীর্ঘস্থায়ী রাখতেন এবং বুওয়ায়রা বাগানের আশে পাশের
এলাকা য় স্থায়ী জ্বালানাে ডপাোনে র ব্যবস্থা করবেন ৷
অতি সতৃরতু মি জ নতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কে রক্ষা পাবে এবং তুমি আরো
জানতে পারবে আমাদের কােনৃ অঞ্চলে আমরা ধ্বংস সৃষ্টি করি ৷
ইবন ইসহাক বলেন, বনু নাযীর গোত্রকে বহিষ্কার এবং কবি ইবন আশরনাযীর হত্যার কথা
উল্লেখ করে তার ইবন যালিক কবিতায় বলেন :
বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ইয়াহুদী পণ্ডি৩ রা অপমানিত হয়েছে ৷ যুগ এ রকমই পরিবর্জাশীল
যা চক্রাকারে আবাতত হয়
তাএ জন্যে হল যে, তারা মহান প্রতিপালকের প্ৰতি কুফরী করেছে ৷ তারা অমান্য করেছে
তীর নির্দেশ ৷ অথচ তার নিদোা হল অত্যন্ত গুরুতুপুর্ণ নির্দেশ ৷
অথচ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল বোধশক্তি ও জ্ঞান ৷ আর তাদের নিকট এসেছিলেন মহান
সতর্ককারী (মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সা) ৷
তাদের নিকট এসেছেন সত্যবাদী সতর্ককা ৷রী ৷ তিনি পৌছিয়েছেন একটি কিতাব এবং সুস্পষ্ট
আয়াতসমুহ ৷ এগুলো আলো ঝলমল দেদীপ্যমান ৷
তারা তাকে বলেছিল, আপনি কোন স৩ বিষয় নিয়ে আয়ুন্ন্ননি ৷ আমাদের পক্ষ থেকে
আপনি প্রত্যাখ্যা ৷ত হওয়ারই উপযুক্ত ৷
তিনি বললেন, আমি বরং সত্য এবং হক নিষয়ই প্রচার করেছি পৌছিয়ে দিয়েছি ৷
ওয়াকিফহাল ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিবর্গ সর্ব অবগত মহান আমার সত্যাফন করেন ৷
যে ব্যক্তি তার অনুসরণ করবে সে সকল প্রকারের হিদায়াতও সত্য পথের দিশা পাবে ৷ আর
যে ব্যক্তি ত ৷কে প্রত্যাখ্যান করবে তবে কা ৷ফিরের৷ তাে লাঞ্ছিতই হবে ৷
বিশ্বাসঘা৩ কত৷ ও কুফরী যখন তাদের স্বভাবে প্রকৃতিতে মিশে গিয়েছে এবং সতাচ্যুতি ও
সত্য থেকে পলায়ন যখন তাদের স্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ৷
তখন আল্লাহ তা আল ৷নবী (সা) কে সত্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের ৷ ওফীক প্রদ৷ ৷ন করলেন ৷ আল্লাহ্
তা আলা মীমাৎসা করেন এমন যীমাৎসা যাতে কোন প্রকারের যুলুম ও অবিচ৷ ৷র থাকে না ৷
আল্লাহ তাআলা তাকে সাহায্য করলেন এবং ওদের উপর বিজয়ী করলেন ৷ আল্লাহ যাকে
সাহায্য করেন যে অন্যতম উৎকৃষ্ট সাহায্যপ্রাপ্ত ৷
তাদের মধ্যে কা ’ব ইবন আশরাফ জঘন্যভ৷ বে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল ৷ এরপর তার মৃত্যুর
পরে বনু নাযীর গো ৷ত্র একেবারেই লাঞ্ছিত হয়ে পড়ে ৷
৷ শ্হ্নি
তারা দৃহাত জোড় করে আত্মসমর্পণ করে ৷ কাব-এর উপর আমাদের প্রসিদ্ধ বীর পুরুষগণ
বিজয়ী হন ৷
মুহাম্মাদ (সা) এর নিদােশ ক৷ ’ব এর ভাই রাণ্ডে তর বেলা তার নিকট যায় (হ৩া৷ করার জন্যে) ৷
সে তার সাথে কুট কৌশল অবলম্বন করে ৷৩ তাকে নীচে নামিয়ে আনে ৷৩ তার সাথে ছিল
সাহসী ও রিশ্বস্ত স৷ ৷থী মাহমুদ ৷
এই বনু নাযীর গোত্র অবস্থান গ্রহণ করছিল মন্দ অবস্থানে ৷ তাদের অপরাধের কারণে
সকারী তাদেরকে ধ্বংস করেছে ৷
একদিন সকাল বেলা ৷ সশস্ত্র মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে ধীর পদক্ষেপে তাদের নিকট উপ
হলেন রাসুলুল্লাহ্ (সা) ৷ তাদের সকল কর্মকাণ্ড তার গোচরীভুত ছিল ৷
সাহসী পাসসান গোত্র শত্রুর বিরুদ্ধে তার সহযোগিতাকারী ছিল ৷ (উপস্থিত হল তারাও) তারা
ছিল গাসসান গোত্রের পরামর্শদাতা ৷
তিনি গিয়ে বললেন, সাবধান! তোমরা আত্মসমর্পণ কর ৷ কিন্তু তারা উন্টোপথ অনুসরণ
করল ৷ মিথ্যা ও অসারতা ৩াদের কর্মকাণ্ডকে তুলপথে পরিচালিত করল ৷
ফলে তারা তাদেরকে ভুল পদক্ষেপের জন্যে থেসারত দিতে হল ৷ বেরিয়ে (গল প্ৰতি
তিনজনে একটি করে উট নিয়ে ৷
তারা স্বেচ্ছায় দেশ ছেড়ে চলে গেল কায়নুক৷ গোত্রের সাথে মিলিত হওয়ার উদ্দেশ্যে ৷ তারা
রেখে গিয়েছিল খেজুর বাগান ও বহু ঘর-বাড়ী ৷
উপরোক্ত কবিতার প্ৰত্যুত্তরে সিমাল ইয়াহ্রদী যে করি৩ ৷ আবৃত্তি করেছিল ইবন ইসহাকত
উল্লেখ করেছিলেন ৷ আমরা ইচ্ছা ৷কৃতভ৷ বে তা বাদ দিয়েছি ৷ ইবন ইসহাক বলেন, বনু নাযীর যুদ্ধ
সম্পর্কে ইবন লুকায়ম আল আবাসী নিম্নের কবিতা আবৃত্তি করেন ৷ কেউ কেউ বলেছেন যে এটি
কায়স ইবন বাহ্র ইবন৩ ৷রীক আ ৷শজ৷ ৷-ঈ এর কবিতা ৷
আমার পরিবার কুরবানী হউক এমন এক লোকের জন্যে যিনি ধ্বংস হবার নন ৷ যিনি
ইয়াহুদীদেরকে জোরপুর্বক অপরিচিত স্থানে যেতে বা ব করেছেন ৷
ইয়াহুদীগণ এখন উচু নীচু অমসৃণ পাথুরে অঞ্চলে শয়ন করে ৷ আর ফলদার খেজুর গাছের
পরিবর্তে তারা পেয়েছে কচি কচি থেজুরের চা ৷রা ৷
মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে আমার যে ধারণা তা যদি সত্যি হয় তবে তোমরা দেখতে পারে যে,
তার অশ্ববাহিনী সালা ও ইয়৷ ৷রামরাম অঞ্চল পর্যন্ত পৌছে গিয়েছে ৷
ওই অশ্বারোহী দিয়ে তিনি আমর ইবন বাহছুাহকে পরাজিত ব ণ্বেন ৷ ওরা তো শত্রু পক্ষ ৷
বন্ধু গোত্র কখনো শত্রু ও অপরাধী গোত্রের ন্যায় হয় না ৷
ওই অশ্বারাে ৷হীর নেতৃত্বে থাকবে সাহসী বীর পুরুষণণ, যাণ্ ৷ভ্রা৷ ৱহু৷ দ্ধর ময়দানে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি
করেন ৷ শত্রুপক্ষের মযবুত ও কঠিন বশণ্ডিলোাক ৷ ৷ অনায়াসে ভেঙ্গে খান খান করে ফেলেন ৷
ওই বীরদের হাতে ৩থাকবে দৃধার ভীক্ষ্ণ৩ রাভীয় তরব৷ ৷বি ৷ আ দ ও জুরহুম গোত্র থেকে বংশ্
পরম্পরায় তারা ওগুলাের ম৷ ৷লিক হয়েছে ৷
আমার পক্ষ থেকে কুরায়শদেরকে একটি বাণী পৌছিয়ে দেয়ার কেউ আছে কি ? আমি
ওদেরকে বলি যে, ওদের জন্যে মযদাি ও সম্মানের আর কিছু কি অবশিষ্ট আছে ?
৩ার৷ জেনে রাখুক যে, তাদের ভাই মুহাম্মাদ (সা)৩ ৷ তার উছিলায় হাজুন ও যামযাম এলাকা
বৃষ্টিস্নাত হয়ে উঠবে ৷
তোমরা যথার্থভ৷ ৷বে তার অনুসরণ কর ৷ তাহলে তোমাদের সকল কাজ কম সু সংগঠিত
সুন্দর হয়ে ৷ দৃনিয়াতে সকল উচ্চ ও মযাদ৷ ৷র স্থানে তোমরা আরোহণ করতে পারবে ৷
তিনি এমন এক নবী যিনি সার্বক্ষণিক আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত প্রাপ্ত হন ৷ তবে কোন
অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে তােমরা তাকে জিজ্ঞেস করে৷ না ৷
হে কুরায়শ গোত্র ! তোমাদের জন্যে তো শিক্ষা রয়েছে বদর যুদ্ধের মধ্যে এবং গোলাকার
কুয়ােগুলোর মধ্যে ৷
স্মরণ কর সেই সকালের কথা যখন তিনি এলেন খায়রাজ গোত্রে ৷ তােমাদেরকে হিদায়াত
করার উদ্দেশ্যে ৷ মহান ও মযাদাবান আল্লাহ্ তাআলার অনুগত হয়ে ৷
তিনি এলেন পবিত্র আত্মা জিবরাঈল (সা) এর সহযোগিতা পুষ্ট হন্;য় ৷ শত্রুর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ
করে দিয়ে এবং বিভিন্ন নিদর্শনে সমুজ্জ্বল হয়ে দয়াময় আল্লাহর সত্য রাসুল রুপে ৷
তিনি এসেছেন দয়াময় আল্লাহ্র রাসুল হিসেবে ৷ আল্লাহর কিতাব তিলৰ্ওয়াত করেন তিনি ৷
সত্য যখন উদ্ভাসিত ও আলোকময় হয়ে ছড়িয়ে পড়ে তখন সর্বত্র পৌছভে আর সময় লাগে না ৷
আমি মনে করি৩ ৷ ৩ার বিষয়টি সর্বক্ষেত্রে প্রসারিত ও বর্ধিত ৩হবে ৷ মহান আল্লাহ্ যেটিকে হক
ও সতব্ররুপে প্রেরণ করেছেন সেটিকে বিজয়ী করার জন্যে ৷
ইবন ইসহ৷ ৷ক বলেন, আলী ইবন আবু তালিব এ প্রসৎগে নিম্নের কবিতা আবৃত্তি করেছেন ৷
ইবন হিশাম বলেনৰু এটি অন্য কো ন মুসলমানের কবিতা ৷ এটিকে আলী (বা ) এর কবিতারুপে
অভিহিত করেন এমন কাউকে আমি পাইনি ৷
আমি উপলব্ধি করেছি ৷ যে কেউ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখবে সেই উপলব্ধি করতে পারবে ৷
আমি সত্যরুপে বিশ্বাস করেছি ৷ আমি সত বিমুখ হইনি ৷
আমি ময়বুত ও সুদৃঢ় বাণীগুলে৷ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিইনি ৷ এগুলে৷ তো এসেছে পরম
দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে ৷
এগুলো আল্লাহর বাণী ৷ ঘু’মিনদের মধ্যে এগুলো পাঠ ও আলোচনা করা হয় ৷ এগুলো দিয়েই
আহমদ (না)-কে মনো ত করা হয়েছে ৷
তাই আহমদ (সা) আমাদের মধ্যে প্রিয় পাত্রে পরিণত হলেন ৷ তিনি সকল স্থানে প্রিয় ও
শক্তিমান ব্যক্তিরুপে আবির্ভুত হলেন ৷
সুতরাং হে লোক সকল যারা তাকে ভয় দেখাতে চাও অজ্ঞতারশত ৷ অথচ তিনি কখনো
কে কান অন্যায় করেননি এরংক কারো সাথে কঠোর আচরণ ৷করেননি ৷
তোমরা কি ভয় কর না নিকটবর্তী আযাবকে ৷ আল্লাহ্ যাকে নিরাপত্তা দেন সে তো ভয়
প্রাপ্তের ন্যায় নয় ৷
তোমরা কি ভয় কর না যে, তোমরা ত র তরবারির আঘাৰ্:স্র ধরাশায়ী হবে ৷ যেমন ধরাশায়ী
হয়েছে আবু আশরাফ কা ব ৷
একদিন ভোরবেলা ৷ আল্লাহ্ তাআলা তার সত্যদ্রোহিতা দেখলেন ৷ এও দেখলেন যে, সে
অবাধ্য উটের ন্যায় সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ৷
সুতরাং তাকে হত্যার আদেশ সহকারে তিনি জিবরাঈল (আ) কে প্রেরণ করলেন তার দরদী
বান্দা মুহাম্মাদ (না)-এর নিকট ৷
রাসুল মুহাম্মাদ (সা) রাতের অন্ধকারে গোপনে তার এক দুত পাঠালেন স্বচ্ছ-সুতীক্ষ্ণ ও খাপ
খোলা তলোয়ার সহ ৷
তার পক্ষ থেকে কতক গুপ্তচর সে রাতে রাত কাটিয়েছিল নিদ্রাহীনভাবে ৷ তারা অপেক্ষায়
ছিল কখন কাবের মৃত্যু সংবাদ শোনা যাবে ৷ কখন এই সংবাদে অশ্রু ঝরবে ৷
ত্রুন্দনকারিণীরা আহমদ (সা ) কে বললো, আমাদেরকে একটু অবকাশ দিন ৷ এখনো আমরা
যথেষ্ট মাতম করে সারিনি ৷
বস্তুত তিনি ওই ইয়াহুদীদেরকে দেশ ছাড়া করলেন ৷ তারপর বললেন, তোমরা চলে যাও
লাঞ্চুনা, অপমানসহ ৷
তিনি বনু নাযীর গোত্রকে বিতাড়িত করলেন এক অপরিচিত ও বিরান ভুমিতে ৷ অথচ তারা
ছিল এক সুসজ্জিত ও চমৎকার মহ্ল্লায় ৷
তাদেরকে নির্বাসিত করে পাঠিয়ে দিলেন সিরিয়ার আয়কআত নামক স্থানে ৷ তারা একের
পেছনে এক সারিবদ্ধতাবে যাচ্ছিল দুর্বল ও ক্ষীণকায় সওয়ারীর পিঠে আরোহণ করে ৷
সিমাল ইয়াহুদী এই কবিতার যে উত্তর দিয়েছিল আমরা তা উল্লেখ থেকে বিরত রইলাম ৷
আল্লাহ্ তাআলা এই সুরার করে তথ্য বিনা যুদ্ধে অর্জিত শত্রু সম্পদ বণ্টনের নীতিমালা বংনাি
করেছেন ৷ তিনি বনু নাযীর গোত্রের সকল সম্পদ রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর মালিকানাধীন বলে ঘোষণা
দিলেন ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) আল্লাহর ইচ্ছানুসারে ওই সম্পদ ব্যয় কল্যালন ৷ এ প্রসংগে সহীহ্
বুখারী ও মুসলিমে হযরত উমর (রা) এর একটি হড়াদীছ রয়েছে ৷ তাতে তিনি বলেছেন, বনুনাযীর
গোত্রের রেখে যাওয়া ধন-সষ্পদ করে তথ্য বিনা যুদ্ধে অর্জিত সম্পদ রুভৈ;প আল্লাহ তাআলা তার
রাসুলের মালিকানায় প্রদান করলেন ৷ এটি অর্জনে মুসলমানপণ ঘোড়য় বা উটে চড়ে যুদ্ধ
করেননি ৷ তাই এটি এককভাবে রাসুলুল্লাহ্ (সা )-এর মালিকানায় ন্যস্ত হন ৷ তিনি ওখান থেকে
তার পরিবারের এক বছরের ভরণপােষণের অর্থ আলাদা করে রাখতেন ৷ আর অবশিষ্ট সম্পদ ব্যয়
করতেন জিহাদের জন্যে অন্ত্রশস্ত্র ও বাহন সংগ্নহে ৷ এরপর আল্লাহ্ তাআন্যে ফায় এর বিধান বর্ণনা
করে বলেন যে, তাতে মুহাজির ও আনসারদের এবং তাদের অনৃসারিগণের হিস্যা রয়েছে আহ্বরা
হিস্যা রয়েছে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের ৷ যাতে এই
সম্পদ শুধু ধনীদের মধ্যে আবর্তিত না হয় ৷ আল্লাহ তাআলা বলেন রাসুলুল্লাহ্ (সা) তেড়ামাদেরকে
যা দেন তা গ্রহণ করবে এবং যা থেকে ধারণ করেন তোমরা তা থেকে বিরত থাকবে ৷ তোমরা
আল্লাহ্কে ভয় কর ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তিদাতা ৷
ইমাম আহমদ বলেন, আবিম ও আফফান আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণনা
করেন ৷ তিনি রাসুলুল্লাহ্ (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হিজরতের প্রথম দিকে মদীনার
লোকজন রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে নিজেদের মালামাল থেকে কতক খেজুর গাছ বা অন্য কিছু প্রদান
করেছিলেন ৷ তার পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের জন্যে ৷ পরবর্তীতে বনু কুরায়যা ও বনুনাযীর গোত্রের
বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বিজয় লাভ করলেন ৷ অন্যদের দেয়া খেজুর গাছ ও অন্যান্য সম্পদ তিনি
ফেরত দিতে শুরু করলেন ৷ হযরত আনাস (রা) বলেন, আমার পরিবারের লোকেরা রাসুলুল্লাহ্
(সা)শ্কে যা দিয়েছিল তা কিৎবা তার কিছু অংশ ফেরত আমার জন্যে আমাকে পাঠালেন ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) ওই মালামাল কিৎবা আরো কিছু উন্মু আয়মানকে দিয়ে দিয়েছিলেন ৷ হযরত
আনাস (রা) বলেন, আমি গিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট তা চাইলাম ৷ তিনি তা আমাকে
ফিরিয়ে দিলেন ৷ এমন সময় সেখানে উম্মু আয়মান এসে উপস্থিত হলেন ৷ তিনি আমার গলায়
কাপড়ে পেচিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো, না-না, আল্লাহর কসম ! ওই মালামাল আমি তোমাকে
দেবনা, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তা তো আমাকেই দিয়ে দিয়েছেন ৷ তিনি হয়ত এরকম আরো কিছু
কথাবার্তা বলেছিলেন ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলছিলেন ৷ হে উম্মু আয়মান ৷ তোমাকে এটা এটা
দিলাম ৷ এটা এটা তোমার জন্যে ৷ কিন্তু উম্মু আয়মান বলতেই থাকলেন , না না, এটা আমি ওকে
দিব না ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলছিলেন ৷ এটা এটা তোমার জন্যে ৷ কিন্তু উম্মু আয়মান আবারো
বলছিলেন, আমি এটা ওকে দেব না ৷ আর রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলছিলেন, ওটা নয় বরং এটা এটা
তোমার জন্যে ৷ হযরত আনাস (রা) বলেন, এভাবে দিতে দিতে আমার মনে হয় বাসৃলুল্লাহ্ (সা)
তাকে দশগুণ বা তার কাছাকাছি পরিমাণ সম্পদ দান করেছিলেন ৷ ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র )
প্রায় এ রকমই বর্ণনা করেছেন ৷
এরপর আল্লাহ ত ৷আলা মুনাফিকদের নিন্দা করেছেন যারা গোপনে গোপনে বনু নাযীর
গোত্রের লোকদেরকে প্ররোচণা দিয়েছিল ৷৩ তারা ওদেরকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ৷ কিন্তু
কো ন সা ৷৩াহায্যই ৷র৷ করেনি ৷ বরং ইয়াহ্রদী গোত্র যখন সাহায্যের জন্যে অধিকতর মুখাপেক্ষী ছিল
তখন তারা ওদেরকে হতাশ করেছে, লাঞ্চুনার পথে ঠেলে দিয়েছে এবং সাহায্যের অঙ্গীকার দিয়ে
প্রতারণা করেছে ৷ এ প্ৰসংগে আল্লাহ্ তাআলা বলেন :
আপনি কি মুনাফিকদেরকে দেখেননি ?৩ তারা কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের
সে সব সঙ্গীকে বলে ওে আমরা যদি বহিবৃচত হও আমরা অবশ্যই তোমাদের সাথে দেশত্যাগী হব
এবং আমরা তোমাদের ব্যাপারে কখনো কারো কথা মানব না ৷ যদি তোমরা আক্রান্ত হও আমরা
অবশ্যই তােমাদেরকে সাহায্য করব ৷ কিন্তু আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ওরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী ৷
বস্তুতঃ তারা বহিষ্কৃত হলে মুনাফিকর৷ তাদের সাথে দেশ ত্যাগ করবেন৷ এবং ওরা আক্রান্ত হলে
এরা ওদের সাহায্য করবে না ৷ এরা সাহায্য করতে এলেও অবশ্যই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে ৷ অতঃপর
তারা কো ন সাহায্যই৷ পা বে না ৷ (৫৯ হ শব ং ১১, ১২) ৷
এরপর আল্লাহ্ তা আল৷ ওই সুরাতে ৩মুনাফিকদের কা পুরুষত৷ মুর্থত৷ ও নির্বৃদ্ধিতার কথা
উল্লেখ করেছেন ৷ এরপর শয়তানের সাথে তাদের উদাহরণ দিয়েছেন ৷ যেমন, শয়তান মানুষকে
বলে কুফরী কর ৷ অতঃপর সে যখন কুফরী করে শয়তান তখন বলে, তোমার সাথে আমার কোন
সম্পর্ক নেই, আমি জপ৩ সমুহের প্রতিপালক আল্লাহ্কে ভয় কবি ৷ ফলে উভয়ের পরিণাম হবে
জাহান্নাম ৷ সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এটিই যালিমদের কর্মফল ৷
আমর ইবন সুদ৷ আল কুরাযী-এর ঘটনা
আমর ইবন সৃদা আল কুরাযী বনুনাষীর গোত্রের মহল্লায় গিয়েছিলেন ৷ সেটি তখন ছিল জন-
মানববিহীন বিরান এলাকা ৷ সেখানে ডাকা রও কেউ ছিল যা উত্তর দেয়ারও কেউ ছিল না ৷ অথচ
বনু নাযীর গো এ ছিল বনুকুরায়যা র তুলনায় শক্তিশালী ও মর্যাদ বদান ৷ বনু নাযীর গোত্রের এ পরাজয়
ও দুঃখজনক পরিণতি আমর ইবন সু দাকে ইসলাম গ্রহণে এবং তাওরাতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ্ (সা)
-এর পরিচিতি প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করে ৷
ওয়াকিদী বলেন, ইব্রাহীম ইবন জা ফর তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, বনুনাষীর
গো ৷এ মদীনা থেকে নির্বাসিত হবার পর আমর ইবন সু দা তাদের বাসন্থ নে আসে এবং ঘুরে ঘুরে
সেই বিধ্বস্ত বাডীঘর দেখতে থাকে ৷ এই ধ্বংসদ্ভুপ নিয়ে সে চিন্তা ভ৷ ৷বন৷ করে ৷ এরপর সে বনু
কুরায়য৷ গোত্রের এলাকায় যায় ৷ সে তাদেরকে তাদের উপাসনালয়ে সমবেত দেখতে পায় ৷ সে