যায়দ (বা) , জা ফর (বা) ও আবদুল্লাহ (রা)-এর
ফযীলত
যায়দ (রা) রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর আযাদকৃত গোলাম ৷ তার বহু পরম্পরা নিম্নরুপ :
ইবন হারিছা ইবন শুরাহীল ইবন কাব ইবন আবদুল উঘৃযা ইবন ইমরুল কায়স ইবন আমির
ইবন নুমান ইবন আ ৷মির ইবন আবদুদ ইবন আউফ ইবন কিনান৷ ইবন বকর ইবন আউফ ইবন
উয্রাহ ইবন যায়দ আল লাত ইবন বুফায়দা ইবন ছাওর ইবন কা লব ইবন উবারাহ ইবন না আর
ইবন হুলওয়ান ইবন ইমরান ইবন আলহাফ ইবন কুদ ৷য়াহ আল-কালবী আল কুযায়ী ৷
তার মা একদিন তাকে নিয়ে তার পরিবার-পরিজনদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্যে রওয়ানা
হলেন ৷ পথে তাদের কাফেলায় ডাকাত হামলা করে ৷ ভাকাতরা তাকে ধরে নিয়ে যায় ৷ তারপর
হাকীম ইবন হিযাম তার ফুফু খাদীজা বিনৃত খুয়ায়লিদ (রা)-এর জন্যে তাকে খরিদ করেন ৷ কেউ
কেউ বলেন, রাসুলুল্পাহ্ (সা) নিজেই তাকে খরিদ করেছিলেন ৷ নুবুওয়াতের পুর্বে খাদীজা (রা)
তাকে রাসুলুল্পাহ্ (সা) এর খিদমতে সমর্পণ করেন ৷ তারপর তার পিতা তার সন্ধান পান ৷ কিন্তু
তিনি রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর কাছে থাকাটইি পসন্দ করেন ৷ রাসৃলুল্লাহ্ (সা)৩ ৷ তাকে আযাদ করে দিয়ে
পালক পুত্ররুপে গ্রহণ করেন ৷ তাই তাকে যায়দ ইবন মুহাম্মাদ বলে ডাকা হত ৷ আর রাসুলুল্লাহ্
(না) তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন ৷ আযাদকৃত দাসদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম মুসলমান
হয়েছিলেন ৷৩ তার সম্পর্কে কুরআনের একাধিক আয়াত নাযিল হয় ং
অর্থাৎ তোমাদের পোষ্য পুত্র,
(যাদেরকে অ ৷ল্লাহ্) তোমাদের পুত্র করেন নাই ৷
অর্থাৎ তোমরা তাদেরকে
ডাক তাদের পিতৃ পরিচয়ে; আল্পাহ্র দৃষ্টিতে এটা অধিকতর সংগত ৷
অর্থাৎ মুহাম্মাদ তোমাদের
মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন ৷
অর্থাৎ “স্মরণ কর, আল্লাহ্ যাকে
অনুগ্রহ করেছেন এবং তুমিও যার প্রতি ৩অনুগ্রহ করেছ তুমি বলছিলে, তুমি তোমার ব্রীর সাথে
সম্পর্ক বজায় রায় এবং আল্লাহ্কে ভয় কর ৷ ’তৃমি তােমার অন্তরে যা গোপন ব্লেখেছিলে আল্লাহ
তা প্রকাশ করে দেবেন : তুমি লোককে ভয় করছিলে অথচ আল্পাহ্ই ভরের অধিকতর হকদার ৷
৫৬ —
এরপর যায়দ যখন যয়নবের সাথে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সাথে
পরিণয়সুত্রে আবদ্ধ করে দিলাম ৷
মুফাস্সিরগণ এ ব্যাপারে একমত যে, উপরোক্ত আয়াতসমুহ৩ তারই সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে ৷
আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন’ এর অর্থ হচ্ছে ইসলাম দান করার মাধ্যমে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন ৷
আর তুমি অনুগ্রহ কাছে এর অর্থ হচ্ছে, আযাদ করার মাধ্যমে তুমি তার প্ৰতি অনুগ্রহ করেছ ৷
আমরা তাফসীরে এ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ৷
এখানে গ্রণিধানযােপ্য যে, আল্লাহ তাআল৷ যায়দ (রা) ব্যতীত অন কোন সাহাবীর নাম
কুরআন মজীদে উল্লেখ করেননি ৷৩ তাকে আল্লাহ্ তা জানা ইসলামের প্রতি পথ প্রদর্শন করেছেন ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাকে আযাদ করে দিয়েছিলেন এবং তার আযাদকৃত দা ৷সী উম্মে আয়মানের সাথে
তার বিয়ে দিয়েছিলেন ৷ উম্মে আয়মানের নাম ছিল বারাকা ৷ তার গার্ভ জন্ম নেন উসামা ইবন
যায়দ (রা) ৷ উসামা ( রা)-কে বলা হত আল-হিব্ব ইবনুল হিব্ব ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার
ফুফ ৷তে৷ বোন যয়নব বিনৃত জ ৷হাশ (রা) কে তার সাথে বিয়ে দেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার চাচা
তার চাচাতাে ভাই জা ফর ইবন আবু তালিব (রা) এর পুর্বে ৷৩ তাকে যুদ্ধের আমীর নিযুক্ত করেন ৷
ইমাম আহমদ (র) ও আবু বকর ইবন আবু শায়বা (ব) — আইশা (বা) হতে বর্ণনা
করেন ৷ তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) যায়দ ইবন হারিছা ৷(রা) কে কোন অভিযানে প্রেরণ
করতেন তখন তাকেই তাদের আমীর নিযুক্ত করতেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) পরে তিনি যদি বেচে
থাকতেন তাহলে তাকেই তার স্থলাভিষিক্ত করতে তন ৷ ইমাম নাসাঈ (র)ও অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন ৷ এ বর্ণনাটির সনদ উত্তম, তবে এতে বিরলত৷ রয়েছে ৷
ইমাম আহমদ (র) আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা ) হতে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন,
একদা রাসুলুল্লাহ্ (সা) একটি সৈন্যদল প্রেরণ করেন এবং উসামা ইবন যায়দ (রা)-কে আমীর
নিযুক্ত করেন ৷” কেউ কেউ তার নেতৃত্বের প্রতি কটাক্ষ করেন ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) র্দাড়িয়ে
বললেন, “তোমরা যারা তার নেতৃত্বের প্রতি কটাক্ষ করছ তারা পুর্বেও তার পিতার নেতৃত্বের প্রতি
কটাক্ষ করেছিল ৷ আল্লাহর শপথ, সে (যায়দ) ছিল নেতৃত্বের যোগ্য ৷ আর আমার কাছে অত্যন্ত
প্রিয় ব্যক্তি ৷৩ তার পরে তার সন্তান উসামা (রা)ও আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ৷ সহীহ্ বুখারী ও
সহীহ্ ম্সলিমে আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) হতে অনুরুপ বর্ণনা এসেছে ৷
বাবযার (র) আইশা (রা) থােক বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, যখন যায়দ ইবন
হারিছ৷ (রা) শাহাদত বরণ করলেন এবং উসামা ইবন যায়দ (রা)-কে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সামনে
আনা হল, তখন তার দুচােখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল ৷ তারপর যে চলে গেল এবং পরদিন আবার
তাকে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সামনে হাযির করানো হল তখন তিনি বললেন, আজ্যক তোমার
সাথে যেরুপ আনন্দ চিত্তে মুলাকাত করছি গতকাল এরুপ আনন্দ ছিল না ৷ ’ এটা একটা তায়ীব
পর্যায়ের হাদীছ ৷
সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ র্মুসলিমে উল্লেখ রয়েছে যেমন পুর্বেও বর্ণনা করা হয়েছে ৷ তাদের
শাহাদতের কথা উল্লেখ করার সময় রাসুলুল্লাহ্ (সা) মিম্বরে উপবিষ্ট ছিলেন ৷ তিনি বলছিলেন,
যায়দ (রা) পতাকা ধারণ করেছে এবং শাহাদত বরণ করেছে ৷ এরপর জাফর পতাকা ধারণ
করেছে ও শাহাদত বরণ করেছে ৷ তারপর আবদৃল্লাহ্ ইবন রাওয়াহা পতাকা ধারণ করেছে এবং
সেও শাহাদত বরণ করেছে ৷ তারপর আল্লাহ্র তলোয়ার সমুহ হতে একটি তলোয়ার (খালিদ
ইবন ওলীদ) পতাকা ধারণ করেছে এবং আল্লাহ্ তাআলা তার হাৰ্ত বিজয় দান করেছেন ৷ রাবী
বলেন , আর রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর দুটো চোখ হতে অশ্রু ঝরছিল ৷ তিনি বললেন, “তারা এখন আর
আমাদের নিকট থেকে সুখ ও আনন্দ পায়না ৷ অন্য এক হাদীছে ররুল্রছে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) ভীদের
শাহাদতের বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন ৷ সুতরাং তারা ঐসর ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত যাদের জন্যে
নিঃসন্দেহে জান্নাত রয়েছে ৷ যায়দ ইবন হারিছা (রা) ও ইবন রাওয়াহা (রা)-এৱ জন্যে হাসৃসান
ইবন ছাবিত শোকগাথা রচনা করেন যা নিম্নরুপ :
হে আমার নয়ন ! সামান্য অশ্রুতে তুমি অশ্রুসিক্ত ৷ নরম ও বিস্তীর্ণ ভুমিতে সমাহিত
কবরবাসীদেরকে তুমি স্মরণ কর ৷ মুতাকে তুমি স্মরণ কর আর যা কিছু ঐ ভুমিতে ঘটে গিয়েছে
তাও তুমি স্মরণ কর সেদিন মুসলমানগণ বিরাট এক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন র্তারা সকাল ও
সন্ধ্যায় অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত ছিলেন ৷ এরপর যুদ্ধের আমীর যায়দ (রা)-কে স্মরণ কর ৷ অর্থাৎ তাদের
জন্যে অশ্রুপাত কর ৷ আমীর ছিলেন অসহায় ও কয়েদীদের জন্যে উত্তম আশ্রয়স্থুল ৷ (তার মধ্যে
ছিল রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা ৷) উত্তম সৃষ্টি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর প্রেম-প্রীতি
ভালবাসাই সব কিছুর উৎস ও সারবন্তু ৷ তিনি ছিলেন সকলের সর্দার ও প্রধান ৷ সুতরাং তার
প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা প্রত্যেকের অম্ভরে বিরাজ করুক ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বা আহমদ (সা)
তোমাদের মৃত্যুর সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে পরিবেশন করেন ৷ তাই তার তুলনা হয় না ৷ এ সংবাদে
সুখ-দুঃখ মিশ্রিত ৷ (তাকে হারিয়ে ফেলা আমার জন্যে দুঃখের বিষয় আর তার জান্নাত প্রাপ্তি
নিঃসন্দেহে একটি মহাসুখের সংবাদ ৷) নিশ্চয়ই যায়দ (বা) আমাদের সমাজে একটি বিরাট সম্মান
নিয়ে বসবাস করতেন ৷ তার এ সম্মান ও ইয্যত কোন মিথ্যাবাদী কিত্বা কোন প্রতারকের
ভেল্কিবাজী নয় ৷ এরপর আবদুল্লাহ্ ইবন রাওয়াহা আনসারী খাযরাজীর জন্যে অশ্রুপাত কর, হে