ছিল ৷ উবাদা (রা) রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে ওই চুক্তি প্ৰত্যাহারের ঘোষণা
দিলেন, এবং ওদের সাথে সম্পর্ক বর্জন করে আল্লাহ্ তাআলা ও রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর পক্ষ
অবলম্বন করলেন ৷ তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লড়াহ্ ! আমি আল্লাহ্ তাআলা, তীর রাসুল এবং
মু’মিনদের সাথে রয়েছি ৷ সাথে সাথে এসব ইয়াহুদী কাফিরদের সম্পাদিত চুক্তি ও বন্ধুত্ব আমি
প্রত্যাহার করে নিচ্ছি ৷ বর্ণনাকারী বলেন, উবাদা ইবন সামিত এবং আবদুল্লাহ ইবন উবাই দুজনকে
উপল্য করে সুরা মায়িদার এ আয়াত নাযিল হয়েছে :
হে মুমিনণণ ! ইয়াহ্রদী ও খৃণ্টানদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করো না , তারা পরস্পর পরস্পরের
বন্ধু ৷ তোমাদের মধ্যে কেউ ওদেরকে বন্ধু রুপে গ্রহণ করলে (ন্ন্ তাদেরই একজন হবে ৷ আল্লাহ্
যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না এবং যাদের অম্ভরে ব্যাধি রয়েছে তুমি তাদের
সত্র ওদের সাথে মিলিত হতে দেখবে এই বলে “আমাদের আশংকা হয় আমাদের ভাগ্য বিপর্যয়
ঘটবে ৷ হয়ত আল্লাহ বিজয় অথবা তার নিকট হতে এমন কিছু দিবেন যাতে তারা তাদের অস্তরে
যা গোপন রেখেছিল তার জন্যে অনুতপ্ত হবে ৷ এবং মুমিনণণ বলবে, এরাই কী তারা যারা
আল্লাহর নামে দৃঢ়ভাবে শপথ করেছিল যে, তারা তোমাদের সংগেই আছে ? তাদের কর্ম নিম্ফল
হয়েছে ৷ ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ হে মুমিনণণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দীন হতে ফিরে
গেলে আল্লাহ্ এমন এক সম্প্রদায় অড়ানবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা র্তাকে ভাল-
বাসবে, তারা মু’মিনদের প্ৰতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে
জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না, এটি আল্লাহ্র অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি
দান করেন এবং আল্লাহ্ প্রাচুর্যময় ও প্রজ্ঞাময় ৷ তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ্ তার রাসুল ও
মু’মিনগণ যারা বিনত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় ৷ কেউ আল্লাহ্, র্তার রাসুল এবং
মু’মিনদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করলে আল্লাহ্র দলই তো বিজয়ী হবে ৷ (৫-মায়িদা : ৫ ১ ৫৬) ৷
আয়াতে “যাদের মনে ব্যাধি আছে” দ্বারা আবদুল্লাহ ইবন উবাইকে এবং “যারা আল্লাহ্কে তার
রাসুলকে এবং মুমিনদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করে” দ্বারা উবাদা ইবন সামিতকে বুঝানো হয়েছে ৷
আমাদের তাফসীর গ্রন্থে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ৷
যায়দ ইবন হারিছার নেতৃত্বে সেনা-অভিযান (বু-কাৱদা অভিমুখে)
এই অভিযান ছিল আবু সুফিয়ানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কুরায়শের ব্যবসায়ী কাফেলার
উদ্দেশ্যে ৷ কেউ বলেছেন, ওই কাফেলা যাত্রা করেছিল সাফওয়ানের তত্ত্বাবধানে ৷ ইউনুস ইবন
বুকায়র (র) ইবন ইসহাক সুত্রে বলেছেন যে, এই অভিযানটি পরিচালিত হয় বদর যুদ্ধের ছয় মাস
পর ৷ ইবন ইসহাক বলেন, ঘটনাটি ছিল এই : বদর যুদ্ধের পুর্বে কুরায়শগণ যে পথে সিরিয়া যেত
বদর যুদ্ধের পর ওই পথে সিরিয়া যেতে তারা ভয় পেতে৷ ৷ তাই এবার তারা ইরাকের পথে রওনা
করে ৷ ওই কাফেলার কুরায়শের বহু ব্যবসায়ী শামিল ছিল ৷ নেতৃত্বে ছিল আবু সুফিয়ান ৷ তার
সাথে প্রচুর রৌপ্য ছিল ৷ ঐগুলোই ছিল এই কাফেলার বড় মুলধন ৷ পথ চিনিয়ে দেয়ার জন্যে
তারা বকর ইবন ওয়ায়েল গোত্রের একজন লোক ৩ ৷ড়ায় নিযুক্ত করে ৷ত তার নাম ছিল ফুরাত ইবন
হায়্যা ন আ ৷জালী ৷ সে ছিল বানু সাহম গোত্রের মিত্র ৷
ইবন ইসহাক বলেন, রাসুলুল্পাহ্ (সা) যায়দ ইবন হারিছা (রা) এর নেতৃত্বে অভিযান প্রেরণ
করলেন ৷ কারাদা নামক জলাশয়ের নিকট তারা কুরায়শী কাফেলার সাক্ষাত পান ৷ কাফেলার
সকল মালামাল ও ধন-সম্পদ তারা অধিকার করেন ৷ কাফেলার লোকজন অবশ্য পালিয়ে যেতে
সক্ষম হয়েছিল ৷ যায়দ ইবন হারিছা (রা) ওই মালামাল নিয়ে এসে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট
জমা দেন ৷ এ প্ৰসংপে হযরত হাসৃসান ইবন ছাবিত (রা) নিম্নের কবিতা আবৃত্তি করেন :
সিরিয়া ৷র ঝর্ণাধারাগুলাে ছেড়ে৩ তারা অন্য পথে যাত্রা করেছে ৷ কারণ, ওই ঝর্ণাধারাগুলো দখল
করে রেখেছে বিশাল বিশাল উটবহ্র ৷ সেগুলোর অগ্নবর্তী দল গতৰিভী উটনীর মুখের ন্যায় ৷
ওই উটগুলে৷ রয়েছে এমন লোকদের হাতে যারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে হিজরত
করেছেন (মুহাজির) এবং যারা তার সত্য সাহায্যকারী (আনসার) ৷ আর এগুলো রয়েছে
ফেরেশতাদের হাতে ৷
ওগুলো আলিজ উপত্যকা থেকে যখন শুষ্ক জলাশয়ের দিকে যাত্রা করবে, তখন তোমরা
ওগুলোকে বলে দিও যে, রাস্তা সেদিকে নয় ৷
ইবন হিশাম বলেন, এ পংক্তিগুলাে হাস্সানের কবিতাসমুহের অন্তর্ভুক্ত
আবুসুফিয়ান ইবনুল হারিছ অবশ্য হাসৃসান (রা)-এর এই চরণগুলাের প্রতৃত্তের দিয়েছিল ৷
ওয়াকিদী বলেন, যায়দ ইবন হারিছা এই সেনা অভিযানে বেরিয়েছিলেন হিজরতের ২৮
মাসের মাথায় জুমাদাল উলা মাসের প্রথম দিকে ৷ কুরায়শী কাফেলা সম্পর্কে তার অভিমত হল
সাফওয়ান ইবন উমাইয়৷ তার নেতৃতৃ দিয়েছে ৷ যায়দ ইবন হারিছা (রা)-এ্যার সেনাপতিত্নে এই
অভিযান প্রেরণের পটভুমি হল নৃআয়ম ইবন মাসউদ তখন মদীনায় আগমন করেছিল ৷ সে তখন
ও তার পিতৃ ধর্মে বিশ্বাসী ৷ কুরায়শী ব্যবসায়ী কাফেলা ইরাকের পথে যাত্রা করেছে তা সে
জানত ৷ মদীনায় বানু নাযীর গোত্রে এসে সে কিনান৷ ইবন আবুল হুকায়ক এর সাথে বৈঠকে
মিলিত হয় ৷ তাদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সালীত ইবন নুমান আসলামী ৷ তারা সকলে মদপান
করল ৷ এ ঘটনা মদপান নিষিদ্ধ হওয়ার পুর্বেকার ৷ কুরায়শী কাফেলার যাত্রা, তাতে সাফওয়ান
ইবন উমাইয়ার নেতৃতৃদান এবং তাদের সাথে থাকা বিপুল মালামালের কথা নুআয়ম ইবন
মাসউদ ওই বৈঠকে আলোচনা করেছিল ৷ এসব শুনে সালীত ইবন নুমান (রা) কালবিলম্ব না করে
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর দরবারে উপস্থিত হলেন ৷ তিনি সব কিছু রাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে জানালেন ৷
তখনই রাসুলুল্লাহ্ (সা) যায়দ ইবন হারিছা (রা)-কে প্রেরণ করলেন ৷ তারা কাফেলাকে ধরে
ফেলেন এবং মালামাল হস্তগত করেন ৷ কাফেলার লোকজন অবশ্য পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় ৷
তারা একজন কিৎবা দৃ’জনকে বন্দী করে নিয়ে আসেন ৷ সব কিছু এসে তারা রাসুলুল্লাহ্ ( সা ) এর
নিকট জমা দেন ৷ বিধি অনুযায়ী রাসুলুল্লাহ্ (না) তার তত্ত্বাবধানে ব্যয় করার জন্যে মোট সম্পদের
ষ্ট৫ অংশ সংরক্ষিত রাখেন ৷ তার মুল্যমান ছিল ২০ হাজার দিরহাম ৷ অবশিষ্ট টু৫ অংশ তিনি
অভিযানে অংশ গ্রহণকারী মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন করে দেন ৷ বন্দীদের একজন হলেন ফুরাত
ইবন হাইয়ান ৷ তারপরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন ৷ ইবন জারীর বলেন, ওয়াকিদীর৷ ধ ৷রণা এই
হিজরী বছরের (৩য় হিজরী) রাবীউল মওসুমে হযরত উছমান (রা) রাসৃলুল্লাহ্ (সা) এর কন্যা উম্মে
কুলছুম (বা ) কে বিয়ে করেন ৷ ওই বছর জুমাদ৷ ল আখির মাসে তাদের বাসর হয় ৷
কা ব ইবন আশরাফের হত্যার ঘটনা
কা ব ইবন আশরাফ বানু তায় গোত্রের লোক ৷ আর তায় গোত্র, বানু নাবহান গোত্রের শাখা
গোত্র ৷ কিন্তু তার যা ছিল বানুনাযীর গোত্রের ৷ ইবন ইসহাক এটি উল্লেখ করেছেন রানু নাযীর
গোত্রের দেশাম্ভরিত করার ঘটনা বর্ণনার পুর্বে ৷ তবে ইমাম বুখাৰী (র) কা ব ইবন আশরাফের
হত্যার ঘটনা উল্লেখ করেছেন বানু নাযীর গোত্রের দেশান্তরিত করার ঘটনা বর্ণনার পরে ৷ তবে
ইবন ইসহাকের বর্ণনাই সঠিক ৷ কারণ, বানুনাযীর গোত্রের ঘটনাটি ঘটেছিল উহুদের যুদ্ধের পর ৷
ওদের অবরাে ধ কালেই মদ নিষিদ্ধ হওয়ার বিধান নাযিল হয় ৷ এসব বিষয় আমরা অবিলম্বে বংনাি
করব ইনশা আ ল্লাহ্ ৷
ইমাম বুথারী (র)৩ তার সহীহ্ গ্রন্থে বলেছেন, “কার ইবন আশরাফ হত্যাকাণ্ড বিষয়ক
অধ্যায় আলী ইবন আবদুল্লাহ জারির ইবন আবদুল্লাহ বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন,
কা ব ইবন আশরাফকে শায়েস্তা করার জন্যে কে আছো ? সে তো মহান আল্লাহ্কে এবং তার
রাসুলকে কষ্ট দিয়েছে ৷ তার কথা শুনে মুহাম্মাদ ইবন মাস্লামা (রা ) উঠে র্দাড়ালেন, তিনি
বললেন, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্! আমি তাকে হত্যা ৷করি৩ ৷কি আপনি পছন্দ করবেন ? রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বললেন, হ৷ করব ৷ মুহাম্মাদ ইবন মাসলামা (রা) বললেন, তাহলে আমাকে এ অনুমতি দিন যে,
আমি তার সাথে কিছু কৌশলপুর্ণ কথা বলব ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হা, তুমি যেমন বলতে
চাও তা বলবে ৷ সে মতে মুহাম্মাদ ইবন মাসলামা কাব ইবন আশরাফের নিকট গেলেন ৷ তিনি
তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ওই লোকটি (মুহাম্মাদ) আমাদের নিকট সাদকা দাবী করেছে ৷ লোকটি
আমাদেরকে খুব কষ্ট দিচ্ছে ৷ আমি আপনার কাছে এসেছি কিছু ঋণ নেয়ার জন্যে ৷ সে বলল,
তাহলে তৃমিও পাল্টা তাকে কষ্ট দাও ৷ তিনি বললেন, অবশ্য আমরা তার আনুগত্য অবলম্বন
করেছি ৷ শেষ পরিণতি না দেখে তাকে ছেড়ে যাওয়া ভাল মনে করছি৷ না ৷ এখন আমি আপনার
নিকট কিছু ঋণ চাচ্ছি ৷ সে বলল, হ৷ ঋণ দিব তবে কিছু একটা বহ্মক রাখতে ৩হবে ৷ আমি
বাংলায়, কী বহ্মক রাখতে চান ? সে বলল, ৫৩ ৷মাদের শ্রীলোকদেরকে আমার নিকট বহ্মক
রাখবে ৷ মাসলামা (রা) ও তার সাথীগণ বললেন, আপনি (তা আরবের অন্যতম রুপবান পুরুষ ৷
আপনার নিকট আমাদের ঘরের ত্রীদেরকে বন্ধক রাখি কেমন করে ? সে বলল, তাহলে
তোমাদের সন্তানদেরকে বন্ধক রাখ ৷ তারা বললেন, সন্তানই বা বহ্মক রাখি কেমন করে ?
তাহলে লোকজন আমাদেরকে পানি দিয়ে আর বলবে দেখ দেখ, এক ওসক কিৎবা দুই ওসক
শস্যের জন্যে ছেলেদের বন্ধক দিয়েছে ৷ এটি হবে আমাদের জন্য লজ্জার বিষয় ৷ আমরা কিছু