আল্লাহ তাআলা মুশরিক বাহিনীকে পরাজিত করেন ৷ এতে র্তার তলোয়ারও চালাতে হয়নি এবং
বর্শাও নিক্ষেপ বরোর প্রয়োজন হয়নি ৷
রাবী আনাস ইবন মালিক (রা) বলেন, হুনায়নের যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন :
যে ব্যক্তি কোন কাফিরকে হত্যা করবে, যে ঐ কাফিরের সাথে থাকা দ্রব্য সামগ্রীর মালিক হবে ৷
রাবী বলেন : সে দিন আবু তালহা (রা) বিশজন কাফিরকে হত্যা করে এবং তাদের
দ্রব্য-সামগ্রীর অধিকারী হন ৷ যুদ্ধের ময়দানে আবুকাতাদা (বা) রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে জানান, ইয়া
রাসুলাল্লাহ্ আমি এক ব্যক্তির র্কাধের শিরায় তলোয়ারের আঘাত মেরে চলে যাই ৷ তার পারে
একটি বর্ম ছিল ৷ একটু সন্ধান নিয়ে দেখুন, বর্মটি কে নিয়েছে ? এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বললেন, ইয়া
রাসুলাল্লাহ্ ! বর্মটি আমি নিয়েছি ৷ এখন তাকে রাযী করিয়ে বর্যটি আমাকে দেওয়ার ব্যবস্থা
করুন ৷ বর্ণনাকারী বলেন, রড়াসুলুল্পাহ্ (সা)এর নিকট কেউ কিছু চাইলে হয় তিনি তাকে তা দিয়ে
দিতেন নয়ত নীরব থাকতেন ৷ এ সময় তিনি নীরব থাকলেন ৷ তখন উমর (রা) বললেন, আল্লাহর
কসম! আল্লাহর সিংহদের মধ্যকার একটি সিংহের উপর প্রাধান্য দিয়ে তিনি কিছুতেই তোমাকে
তা দিবেন না ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলে উঠলেন : উমর যথার্থই বলেছে ৷ রাবী বলেন,
রণাংগনে আবু তালহা (রা) এর সাথে (তার শ্রী) উম্মু সুলায়মের সাথে সাক্ষাৎ হয় ৷ তখন তার
কাছে একটি খঞ্জর দেখতে পেয়ে আবু তালহা (রা) জিজ্ঞেস করলেন, এটা আবার কি ৷ জবাবে
উম্মু সুলায়ম (রা) বললেন, কোন মুশরিক যদি আমার কাছ দিয়ে যায়, তবে এটা আমি তার
পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিব ৷ আবু তালহা (রা) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ৷ উম্মু সুলায়ম কি বলছে,
তা কি শুনতে পাচ্ছেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তখন একটু হেসে দিলেন ৷ উম্মু সুলায়ম (রা) বললেন,
ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! এরপর আমি সেই সব নও মুসলিমকে হত্যা করবো, যারা আপনাকে ফেলে
পালিয়ে গিয়েছে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : ওহে উম্মু সুলায়ম ৷ আল্লাহ্ই তাদের জন্যে যথেষ্ট ও
উত্তম ৷ ইমাম মুসলিম আবু তালহ৷ (রা) থেকে উম্মু সুলায়মের খঞ্জরের ঘটনা এবং ইমাম আবু
দাউদ নিহতের দ্ৰব্য-সামগ্রী হত্যাকারীর প্রাপ্য রাসুলুল্লাহ্র (সা) এ উক্তি উল্লেখ করেছেন ৷ তারা
উভয়েই হাম্মাদ ইবন সালমার সুত্রে এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন ৷ এ ক্ষেত্রে উমরের কথিত বলে
উল্লিখিত উক্তিটি নির্ত্যযোগ্য নয় ৷ বরং প্রসিদ্ধ মতে ঐ উক্তিটি ছিল আবু বকর সিদ্দীকের ৷
ইমাম আহমদ বলেন : আবদুস সামাদ ইবন আবদুল ওয়ারিছ থেকে বর্ণনা করেন
যে, নাফি আবু গালিবের উপস্থিতিতে আলা ইবন যিয়াদ আদাবী আনাস ইবন মলিক (রা)-কে
জিজ্ঞেস করেন, হে আবুহামযা ! নুবুওয়াত প্রাপ্তিকালে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর বয়স কত ছিল ৷ তিনি
বললেন, চল্লিশ বছর ৷ তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, এরপরের হিসেব কি ৷ তিনি জবাব দিলেন,
এরপর তিনি মক্কায় থাকেন দশ বছর ৷ তারপরে মদীনায় থাকেন আরও দশ বছর ৷ এই মোট ষাট
বছর পুর্ণ হওয়ার পর আল্লাহ তাকে তার নিকট উঠিয়ে নেন ৷ আলা ইবন যিয়াদ জিজ্ঞেস করেন,
ইনতিকালের সময় তার শারীরিক অবস্থা কেমন ছিল ৷ আবুহামযা বলেন, তখনও তিনি ছিলেন
সর্বোৎকৃষ্ট যুবক ৷ সবার চেয়ে সুন্দর ও উত্তম দৈহিক গঠন বিশিষ্ট এবং সবচেয়ে অধিক
শৌর্য-বীর্যের অধিকারী ৷ প্রশ্নকারী আবার জিজ্ঞেস করলো, হে আবুহামযা ! আপনি কি রাসুলুল্পাহ্
(না)-এর সাথে কোন যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন ? তিনি বললেন, হী৷ ৷ আমি হুনায়নের যুদ্ধে তার
সাথে অংশ গ্রহণ করেছি ৷ সে যুদ্ধে ঘুশরিক বাহিনী অতি প্রত্যুষে অঘোদের উপর হামলা চালায় ৷
তখন দেখলাম, আমাদের অশ্বারোহী বাহিনী আমাদের পশ্চাতে রয়েছে ৷ আরও দেখলাম,
মুশরিকদের মধ্যে এক ব্যক্তি প্রবল বেগে আমাদের উপর আক্রমণ করে আমাদেরকে দলত-
মথিত করে চলছে ৷ এ অবস্থা দেখে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বাহন থেকে অবতরণ করলেন ৷ এরপর
আল্লাহ্ তাদেরকে পরাজিত করলেন এবং তারা রণে-তৎগ দিয়ে পলায়ন করলো ৷ মুসলমানদের
বিজয় দেখে রাসুলুল্লাহ্ (না) এক জায়গায় দীড়ালেন ৷ এরপর একের পর এক মৃসলমানরা
াত্রুদের বন্দী করে তার কাছে নিয়ে আসতে থাকেন ৷ আর তিনি তাদেরকে ইসলামের উপর
বায়আত করতে থাকেন ৷ এ সময় নবী (না)-এর জনৈক সাহাবী বিনীতভান্থব জানলে অহ্মি মানত
করেছি, যে মুশরিক লোকটি যুদ্ধের সময় আমাদেরকে দলিত মথিত করেছিল, যে যদি বন্দী হয়ে
আসে তবে আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেব ৷ এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) নীরব থাকেন ৷ এ সময়
সে লোকটিকে বন্দী করে নিয়ে আসা হল ৷ রাসুলুল্পাহ্ (না)-কে দেখেই সে বলে উঠলো, হে
আল্লাহর নবী ! আমি আল্লাহর নিকট তওবা করেছি ৷ রাৰী বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার কথা শুনার
পরে নীরব থাকলেন এবং তাকে বায়আত করা হতে বিরত থাকলেন ৷ উদ্দেশ্য ছিল এই যে,
যাতে অপর লোকঢি এ সুযোগে তার মানত পুরণ করতে পারে ৷ কিন্তু সে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
দিকে তাকিয়ে তীর নির্দেশের অপেক্ষা করছিলো ৷ বিনা অনুমতিতে হত্যা করতে সে ভয়
পাচ্ছিলাে ৷ নবী (না) যখন দেখলেন, যে কিছুই করছে না তখন তিনি তাকে বন্য়আত করেন ৷
তখন সে বললাে, হে আল্লাহর নবী ! আমার মানতের কি হলো ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আমি
তো দীর্ঘক্ষণ বায়আত করা থেকে বিরত ছিলাম যাতে তুমি তোমার মানত পুরণ করতে পার ৷ সে
বলল্যে, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! আপনি আমাকে একটু ইংগিত দিলেন না কেন ? তিনি বললেন, হত্যার
জন্যে ইংগিত করা নবীর জন্যে শোভা পায় না ৷ এ ঘটনা ইমাম আহমদ এককভাবে বর্ণনা
করেছেন ৷ ইমাম আহমদ বলেন : আমার নিকট ইয়াযীদ আনাস ইবন মালিক (রা)
থেকে বর্ণনা করেন যে, হুনায়নের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এ দৃআ করেছিলেন : “হে আল্পাহ্
আপনি যদি চান আজকের দিনের পর এ পৃথিবীতে আর আপনার ইবাদত করার প্রয়োজন
নেই ৷ এ হাদীছের সনদে বর্ণনাকারীদের সংখ্যা মাত্র তিনজন এবং এটি বুখারী ও মুসলিমের
শর্ত অনুযায়ী বর্ণিত ৷ তবে অন্য কোন হাদীছ সংকলনকারী এই সনদে এ হাদীছ বর্ণনা করেননি ৷
ইমাম বুখারী মুহাম্মাদ ইবন যাশৃশারের সুত্রে আবুইসহাক থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি
বারা ইবন আযিব (রা) থেকে শুনেছেন, যখন কায়েম গোত্রের জনৈক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস
করেছিলো, হুনায়ন যুদ্ধে আপনারা কি রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন ?”
তিনি বললেন, তবে বাসুলুল্লাহ্ (সা) জ্যি পালিয়ে যাননি ৷ হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা ছিল সুদক্ষ
ভীরন্দাজ ৷ কিন্তু আমরা যখন তাদের উপর আক্রমণ করলাম তখন তারা ছত্রতত্গ হয়ে যায় ৷
এরপর আমরা গনীমত সংগ্রহের দিকে মনোনিবেশ করলাম ৷ ঠিক তখনি আমরা তাদের ভীৱন্দাজ
বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হই ৷ তখন আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে তীর সাদা রংয়ের খচ্চরের উপর
আরোহী অবস্থায় দেখেছি ৷ আর আবুসুফিয়ান তীর খচ্চরের লাগাম ধরে ছিলেন ৷
তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন : আমি আল্লাহর নবী, এতে কোন মিথ্যা নেই
এ হাদীছ ইমাম বুখারী আবুল ওয়ালীদের সুত্রে শু’বা থেকেও বর্ণনা করেছেন ৷ এতে
আছে রাসুলুল্পাহ্ (সা) বলেছিলেন : আমি নবী, এতে কোন মিথ্যা নেই ; আমি আবদুল
ঘুত্তালিবের সন্তান” ৷
বুখারী বলেন, ইসরাঈল ও যুহায়র আবু ইসহাকের সুত্রে বারা (রা) থেকে বলেছেন যে , তখন
রাসুলুল্লাহ্ (সা) তীর খচ্চরের উপর থেকে নীচে অবতরণ করেছিলেন ৷ মুসলিম ও নাসাঈ বুনদার
থেকে এবং মুসলিম ও আবুমুসা উভয়ে গুনদুর থেকে এ হাদীছ অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ এ ছাড়া
ইমাম মুসলিম যাকারিয়া ইবন আবুযায়িদা আবুইসহাক সুত্রে বাবা (রা) থেকে এ হাদীছ বর্ণনা
করেন ৷ এর শেষে আছে “এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) খচ্চয় থেকে অবতরণ পুর্যক আল্লাহ্র সাহায্য
প্রার্থনা করে বলেন : “আমি সত্য নবী ৷ এতে কোন মিথ্যা নেই, আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান
; হে আল্লাহ্ ! আপনি আপনার সাহায্য নাযিল করুন ৷” ৰারা (রা) বলেন, যুদ্ধের উত্তেজনা যখন
চরমে উঠল্যে, তখন আমরা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর আড়ালে আশ্রয় খুজছিলাম ৷ আর বীর পুরুষরাই
তার কাছাকাছি থাকতে পারত ৷ বায়হাকী বিভিন্ন সুত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুস্লাহ্ (না) সে দিন
বলেছিলেন আমি সন্নাত্ত ব্যক্তির সন্তান ৷ তাবারানী আব্বাস ইবন ফয়ল
সুত্রে ইবন আসিম সুলামী থেকে বর্ণনা করেন যে, ৱাসুলুল্লাহ্ (সা) হুনায়ন যুদ্ধের দিন
বলেছিলেন আমি কুরায়শ বংশীয় সম্রঅে লোকের সন্তান ৷
ইমাম বুখারী আবদুল্লাহ্ ইবন ইউসুফ সুত্রে আবুকাতাদা (রা) থেকে বর্ণনা করেন
যে, তিনি বলেছেন, হুনায়নের বছর আমরা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে যুদ্ধে গমন করি ৷ যখন
আমরা শত্রুদের মুখোমুখি হই, তখন মুসলমানরা কিছুটা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছিল ৷ এ সময় আমি
দেখলাম, মুশরিকদ্যেত্ব এক ব্যক্তি মুসলমানদের এক ব্যক্তির উপর চড়াও হয়ে প্রায় কাবু করে
ফেলছে ৷ তখন আমি পিছন দিক থেকে গিয়ে ঐ মুশরিকের র্কাধের শিরার উপর তলোয়ার দ্বারা
সজােরে আঘাত হানি ৷ এতে তার লৌহ বর্ম কেটে যায় ৷ লোকটি আমার দিকে এগিয়ে এসে
আমাকে জাপটে ধরে এমন জোরে চাপ দিল, যে আমি মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে লাগলাম ৷
এরপর লোকটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো এবং আমাকে ছেড়ে দিল ৷ এরপর আমি উমর (রা)
-এর কাছে গিয়ে বললাম, লোকজনের কি হয়েছে : তিনি বললেন, আল্লাহ্র ইচ্ছাই কার্যকরী হয় ৷
এরপর মুসলমানরা নিজনিজ স্থানে ফিরে আসলো ৷ বিজয় শেষে রাসুলুল্লাহ্ (না) এক জায়গায়
বলে ঘোষণা করলেন : কেউ যদি কোন শত্রুকে হত্যা করে থাকে এবং তার পক্ষে প্রমাণ থাকে
তবে সেই হবে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত দ্রব্য-সামগ্রীর অধিকারী ৷ এ কথা শুনে আমি দাড়িয়ে
গেলাম এবং উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্যে বললাম, “আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার কেউ আছে
কি?” কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে আমি বসে পড়লাম ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) পুনরায় অনুরুপ
ঘোষণা দিলে আমি আবার দাড়িয়ে বললাম, “আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার কেউ আছে কি ?
এবারও কোন সাড়া না পেয়ে আমি বসে পড়লাম ৷ এরপর রাসুলুল্পাহ্ (সা) আবারও অনুরুপ
ঘোষণা দিলে আমি পুনরায় দাড়িয়ে পেলাম এবং বললাম, “কে আছে আমার পক্ষে সাক্ষ্য
দেবার?” কিন্তু কেউ সাক্ষ্য না দেওয়ার আমি বসে পড়লাম ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) চতুর্থরার
অনুরুপ ঘোষণা দিলে আমি দাড়িয়ে গেলাম ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (যা) আমাকে বললেন, “আবু
কাতাদা ! তোমার কি হয়েছে?” তখন আমি তাকে বিষয়টি জানালাম ৷ এ সময় এক ব্যক্তি উঠে
বললাে, আবু কাতাদা ঠিকই বলেছেন ৷ তীর দ্রব্য-সামগী আমার কাছে আছে ৷ তবে সেগুলো
আমাকে দিয়ে দেওয়ার জন্যে তাকে সম্মত করে দিন ৷ তখন আবু বকর (রা) বললেন, “না,
আল্লাহর কসম ৷ তা হতে পারে না ৷ আল্লাহর সিংহদের মধ্যে এক সিংহ যে আল্লাহ্ ও তার
রাসুলের পক্ষে যুদ্ধ করেছে, তার যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যাদি রাসুলুল্লাহ্ (সা) তোমাকে দিয়ে দিবেন : এ হতে
পারে না ৷ ” নবী (সা) বললেন : আবু বকর ঠিকই বলেছেন ৷ সুতরাং দ্রব্যগুলি তুমি তাকে দিয়ে
দাও ৷ আবু কাতাদা বলেন, তখন সে নিহতের দ্রব্যগুলো আমাকে ফেরত দিয়ে দিল ৷ পরবআত
এ দ্রব্যণ্সাম্গ্রীয় বিনিময়ে আমি বনুসালিমার একটি বড় খেজুর বাগিচা খরিদ করি ৷ আর এটাই
ছিল ইসলাম গ্রহণ করার পর আমার প্রথম উপার্জিত সম্পদ ৷ নাসাঈ ব্যতীত অন্যান্য
হাদীছবেত্তাগণ এ হাদীছটি ইয়াহ্য়া ইবন সাঈদ থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷
ভিন্ন সনদে ইমাম বুখারী বলেন : লায়ছ ইবন সা’দ সুত্রে আবুকতােদা থেকে বর্ণিত ৷
তিনি বলেন, হনায়ন যুদ্ধের দিন আমি দেখতে পেলাম, একজন মুসলমান ও একজন মুশরিক
লড়াই করছে ৷ অপর একজন মুশরিক যুদ্ধরত মুশরিকের পক্ষ অবলম্বন করে পিছনের দিক থেকে
চুপিসারে মুসলমান ণ্লাকটিকে হত্যা করতে চাইছে ৷ আমি দ্রুত গতিতে ঐ লোকটির কাছে
গেলাম ৷ সে আমাকে আঘাত করার জন্যে তার হাত উত্তোলন করলো ৷ কিন্তু তার পুর্বেই আমি
পাল্টা৷ আঘাত ছেলে তার হাত কেটে ফেললাম ৷ সে তার অপর হাত দিয়ে আমাকে ভীষণভাবে
জাপটে ধ্ৱলো এতে আমি মৃত্যুর আশংকা করলাম ৷ তারপরে সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ধড়াস
করে মাটিতে পড়ে যায় ৷ আমি আর একটি আঘাত করে তাকে হত্যা করে ফেলি ৷ যুদ্ধের এক
পর্যায়ে মুসলমানরা রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে ৷ তাদের সাথে আমিও পলায়ন করি ৷ পথে উমর
ইবন খাত্তাব্ (রা)-ণ্ক লোকজনের সাথে দেখে জিজ্ঞেস করলাম : “ব্যাপার কি ? মানুষের এ
অবস্থা কেন ? তিনি বললেন, “সবকিছু আল্লাহর হুকুমেই হয় ৷ এরপর সমস্ত লোক রাসুলুল্পাহ্
(না)-এর কাছে এসে সমবেত হয় ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) ঘোষণা করলেন : “যে ব্যক্তি প্রমাণ
দিতে পারবে যে, সে কোন মুশরিককে হত্যা করেছে তা হলে ঐ নিহত ব্যক্তির সংগে থাকা
দ্রব্য-সামগ্রী সে-ই পাবে ৷ তখন আমি দীত্যিয় আমার হাতে নিহত হওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে প্রমাণের
সন্ধান করলাম ৷ কিন্তু আমার পক্ষে কোন সাক্ষ্য না পেয়ে আমি বসে পড়লাম ৷ এরপর এক
সুযোগে আমি বিষয়টি রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট উল্লেখ করলাম ৷ তখন সেই মজিলেসের এক
ব্যক্তি বললাে, “উল্লিখিত নিহত ব্যজ্যি অস্ত্রপাতি আমার কাছে আছে ৷ এখন এ বন্তুগুলো আমার
কাছে থাকার ব্যাপারে তাকে রাযী করে দিন ৷ ” তখন আবু বকর (রা) বললেন, “তা কখনও হতে
পারে না ৷ আল্লাহর সিংহদের মধ্য থেকে এক সিংহ যে আল্লাহ ও তার রাসুলের পক্ষে যুদ্ধ করেছে
তাকে বাদ দিয়ে কুরায়শের এক নগণ্য ব্যক্তিকে তিনি এটা কিছুতেই দিবেন না ৷ আবু কাতাদা
বলেন, তখন রাসুলুল্পাহ্ (সা) দাড়িয়ে গেলেন এবং নিহতের দ্রব্য-সামঘীগুলো তার কাছ থেকে
নিয়ে আমাকে দিয়ে দেন ৷ পরে এ সব দ্রব্য দ্বারা আমি একটা থেজুরের বাগান খরিদ করি ৷ আর
ঙুটইি ছিল আমার প্রথম উপার্জিত সম্পদ ৷ ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম উভয়েই এ হাদীছ
লায়ছ ইবন সাদের সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ ইতিপুর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নাফি আবু
গালিব আনাসের সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, উপরে উল্লিখিত বক্তব্যটি উমর ইবন খাত্তাবের ৷
সম্ভবতঃ উমর (রা) আবু বকর (রা)-এর বক্তব্য সমর্থন করার বর্ণনাকারী উমর (বা)-এর বক্তব্য
বলে ধরে নিয়েছেন ৷ অথবা হতে পারে বর্ণনাকারী বিষয়টি গুলিয়ে ফেলে এরুপ বলেছেন ৷
আল্লাহ-ই সমধিক জ্ঞাত ৷
হাফিয বায়হাকী হাকিমের সুত্রে জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে,
হুনায়ন যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ্ (না) মুসালমানদের ছত্রতংগ অবস্থা দেখে আব্বাস (বা) কে ডেকে
বললেন, তুমি আনসার ও হুদায়বিয়ার সাথীদের ফিরে আসার জন্যে আহ্বান কর এবং বল,
বৃক্ষের নীচে বায়আত
গ্রহণকারী হুদায়বিয়ার সাথীরা বলে সাড়া দিলেন ৷ সকলেই
নিজ নিজ উট থামাবার চেষ্টা করলেন ৷ কিন্তু ণ্কানক্রমেই তাতে সক্ষম হলেন না ৷ তখন তীরা
নিজেদের র্কাধের উপর থেকে বর্ম ছুড়ে ফেলে শুধু ঢাল-তলােয়ার নিয়ে আমার ধ্বনি অনুসরণ
করে অগ্রসর হতে থাকেন ৷ এভাবে আসতে আসতে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট একশত লোক
পৌছে গেলেন ৷ তখন তীরা শত্রুর মুখোমুখি হয়ে যুদ্ধ শুরু করে দেন ৷ প্রথম দিকে আহ্বান ছিল
আনসারদের প্রতি আর শেষের দিকে ছিল খাযরাজদের প্রতি ৷ যুদ্ধের ময়দানে এরা চরম
ধৈর্য-শৈর্যের পরিচয় দেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বাহনের রিকবেদ্বয়ে পা রেখে যুদ্ধ ক্ষেত্রের দিকে দৃষ্টি
প্রসারিত করেন ৷ মুসলিম সৈন্যদের বীরতুপুর্ণ যুদ্ধ অবলােকন করে বলে উঠলেন :এটাই যুদ্ধের চরম উত্তেজ্যাপুর্ণ মুহুর্ত ৷ রাবী বলেন, আল্লাহর কসম ! পলায়নকরীি
লোকজন রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট ফিরে আসার অল্পক্ষণের মধ্যেই যুদ্ধের চুড়ান্ত ফায়সালা হয়ে
গেল ৷ দেখা গেল, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট শত্রু-পক্ষের বহু বন্দীকে সারিবদ্ধ করে রাখা
হয়েছে ৷ অবশিষ্টদের মধ্যে এক অংশ আল্লাহ্র ইচ্ছামত যুদ্ধের ময়দানে নিহত হয় ; এবং আর
এক অংশ রণাংগন থেকে পালিয়ে যায় ৷ এ যুদ্ধে আল্লাহ্ তীর রাসুলকে পনীতম হিসেবে শত্রুদের
প্রচুর সম্পদ ও তাদের সম্ভান-সত্ততি বন্দীরুপে দান করেন ৷
ইবন লাহয়া’ আবুল আসওয়াদের সুত্রে উরওয়া থেকে বর্ণনা করেন এবং মুসা ইবন উকবা
তীর মাগাযী গ্রন্থে যুহরী থেকে উল্লেখ করেন যে, আল্লাহ্ তাআলা বাসুলুল্পাহ্ (না)-কে মক্কা বিজয়
দান করলে তিনি সেখানে তীর প্রতিনিধি নিয়োগ করে হাওয়াযিনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান ৷
মক্কার সাধারণ নাগরিকরাও এ সময় তীর সহযাত্রী হয়, কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি ৷ তাদের মধ্যে
কেউ যায় বাহনে চড়ে, কেউ যায় পায়ে হেটে ৷ এমন কি তাদের ত্রীরা পর্যন্ত অভিযানে শরীক হয় ৷
এ সব লোক তখনও পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করেনি ৷ এরা যায় দর্শক হিসেবে এবং গনীমতের আশা
নিয়ে ৷ এতদ্সত্তেও রাসুলুল্লাহ্ (সা) ও সাহাবাগণের উপর কোন বিপর্যয় আপতিত হলে তাতে
তাদের কোন প্রকার আপত্তি ও মনঃপীড়া ছিল না ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সংগে ছিল আবু সুফিয়ান
ইবন হারব এবং সাফওয়ান ইবন উমাইয়া ৷ সাফওয়ড়ানের সংগে ছিল তার মুসলমান শ্রী ৷
সাফওয়ান তখনও ছিল মুশরিক ৷ বিন্তু ধর্মের বিভিন্নতা সত্বেও তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেনি ৷
বর্ণনাকারিগণ বলেন, এ যুদ্ধে মুশরিক বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল মালিক ইবন আওফ নাসরী ৷ তার
সংগে জি দুরায়দ ইবন সাম্মা ৷ বয়সের ভাবে তার শরীর র্কাপছিল ৷ মুশরিক বাহিনীর সাথে ছিল
নারী, শিশু ও জীব-ত্তক্ষ্ম ৷ রাসৃলুল্লাহ্ (সা) শত্রু বাহিনীর গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্যে আবদুল্লাহ
ইবন আবু হাদরাদকে গোয়েন্দা হিসেবে প্রেরণ করেন ৷ তিনি শত্রুদের মধ্যে মিশে গিয়ে রাত্রি
যাপন করেন ৷ তখন তিনি শুনতে পেলেন মালিক ইবন আওফ তার বাহিনীকে সম্বোধন করে
বলছে ৷ “ভোর বেলা তোমরা মুসলিম বাহিনীর উপর একযোগে অতর্কিতে হামলা করবে ৷
তরবারিগুলোর খাপসমুহ ভেঙ্গে ফেলবে ৷ তোমাদের পশুগুলোকে এক লাইনে রাখবে এবং
মহিলাদেরকে আলাদা লাইনে কাতাববন্দী করে রাখাব ৷” সকাল হলে আবু সুফিয়ান, সাফওয়ান ও
হাকীম ইবন হিযাম আলাদা হয়ে মুসলিম বাহিনীর পিছনে গিয়ে অবস্থান নেয় ৷ সেখানে থেকে
তারা লক্ষ্য করছিলো যে দেখা যাক বিপদ কাদের ঘাড়ে চাপে ৷ মুসলিম বাহিনীকে সারিবদ্ধভাবে
র্দাড় করার হয় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার সাদা খচ্চরে আরোহণ করে মুসলিম সৈন্যদের লাইনের
সম্মুখে আসেন এবং যুদ্ধ করার নির্দেশ দান করেন ৷ যুদ্ধের জন্যে উদ্বুদ্ধ করেন এবং ধৈর্য ধারণ
করলে বিজয়ের সুসংবাদ দেন ৷ এমতাবস্থায় মুশরিক বাহিনী মুসলিম বাহিনীর উপর একযোগে
অতর্কিতে হামলা চালায় ৷ ফলে মুসলিম বাহিনী সহসা ছত্রভত্গ হয়ে পড়ে ৷ তারপরে যুদ্ধক্ষেত্রে
থেকে দ্রুত পলায়ন করে ৷ হারিছা ইবন নু’মান বলেন, মুসলিম বাহিনী পলায়ন করে যাওয়ার পর
রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে যারা অবশিষ্ট ছিল তাদের সংখ্যা হবে আনুমানিক একশ’ ৷
বর্ণনাকারিগণ বলেন : কুরায়শদের এক ব্যক্তি সাফওয়ান ইবন উমাইয়ার পাশে গিয়ে বললো,
সুসংবাদ শুনুন মুহাম্মাদ ও তার সাথীরা পরাজিত হয়েছে ৷ আল্লাহর কসম ৷ তারা আর ঐক্যবদ্ধ
হয়ে মাথা উচু করে র্দাড়াতে পারবে না ৷ তখন সাফওয়ান তাকে বললাে , তুমি আমাকে আরব
বেদুঈনদের বিজয়ের সুসংবাদ দিচ্ছ ষ্ আল্লাহর কসম ! কোন কুরায়শীর নেতৃত্ব বেদৃঈনের নেতৃত্ব
অপেক্ষা আমার কাছে অধিক পসন্দনীয়, এ
কথা বলার জন্যে সাফওয়ান ঐ ব্যজ্যি উপর ণ্ক্রাধাষিত হয় ৷
উরওয়া বলেন : সাফওয়ান তার এক পােলামকে যুদ্ধের সংকেত জানার জন্যে পাঠিয়ে দেয় ৷
সে ফিরে এসে জানানো যে, আমি শুনতে পেলাম মুসলমানরা এই বলে ডাকাডাকি করছে হে
বনু আবদুঃ৷ রহমান ! হে বনু আবদুল্লাহ ৷ হে বনু উবায়দৃল্লাহ্ ! তার বক্তব্য শুনে সাফওয়ান বললাে ,
মুহাম্মাদ জয়লাভ করেছেন ৷ যুদ্ধে তারা এই সাৎকেতিক শব্দ ব্যবহার করে ৷
বর্ণনাকারিগণ বলেন : যুদ্ধের প্ৰচগুতা যখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে ভাবিয়ে তোলে তখন তিনি
তার বাহন খচ্চরের রিকাবদ্বয়ের উপর দাড়িয়ে দৃ’হাত ভুলে আল্লাহর নিকট দৃআ করেন এবং
বলেন : “হে আল্লাহ ! আপনি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েহ্নেষ্ক তা পুরণ করুন ৷ হে আল্লাহ ! ওরা
যেন আমাদের উপর জয়লাভ করতে না পারে ৷” দৃআ শেষে তিনি তার সাহাবীদেরকে যুদ্ধের
প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে আহ্বান করেন হে হুদায়বিয়ার বায়আত গ্রহণকারী সাহাৰীগণ ! আল্লাহ্কে
ভয় কর, আল্লাহ্কে ভয় কর, তোমরা তোমাদের নবীর কাছে ফিরে এসো ৷ তিনি তাদেরকে আরও
উদ্বুদ্ধ করে বলেন : হে আল্লাহর সাহায্যকারিগণ ! হে আল্লাহর রাসুলের সাহায্যকারিগণ ! হে
খাযরাজ গোত্রের লোকজন ! হে সুরা বাকারার সাথীপণ ! এভাবে নিজে আহ্বান করার পর তিনি
কোন কোন সাহাবীকে অনুরুপভাবে আহ্বান করার জন্যে আদেশ করেন ৷
বর্ণনাকারিগণ বলেন : এ সময়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) নিজের হাতে এক মুঠাে কংকর নিয়ে
মুশরিকদের চোখ-মুখ লক্ষ্য করে ছুড়ে মারেন এবং মুখে উচ্চারণ করেন প্রু; ধ্এ ;া১ট্র
ওদের চেহারা ৰিবর্ণ হোক ৷ তখন তার সাহাবীগণ অতি দ্রুত তীর কাছে ফিরে আসেন ৷ রাবীগণ
বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (না) এ সময় বলেছিলেন : ,াশুপু ৷ র্শে,১ ,প্লুখু ৷ “এখন যুদ্ধের চরম
মুহুর্ত ৷ তারপর আল্লাহ তার দৃশমনদের সম্পুর্ণরুপে পর্বুদংঘ্র করেন ৷ শত্রুদের প্ৰতেকের
চোখে-মুখে নিক্ষিপ্ত কংকর লেগে যায় ৷ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তারা পলায়ন করে ৷ মুসলমানরা তাদের
পশ্চাদ্ধাবন করে অকাতরে হত্যা করেন ৷ এ যুদ্ধে আল্লাহ্ তাআলা ওদের নারী ও শিশুদেরকে
গনীমত হিসেবে মুসলমানদেরকে প্রদান করেন ৷ এ দিকে সেনাপতি মালিক ইবন আওফ ও তার
গোত্রের সর্দারপণ পালিয়ে তায়েফের দুর্গে প্রবেশ করে ৷ এ সময় রাসুভৈলর প্ৰতি আল্লাহর সাহায্য
ও নীল ইসলামের অপ্রতিরোধ্য শক্তি ন্প্রতাক্ষ করে মক্কার বহু সংখ্যক থেকে ইসলাম গ্রহণ করে ৷
ইমাম বায়হাকী এটি বর্ণনা করেছেন ৷
ইবন ওয়াহব বলেন, ইউনুস কাহীর ইবন আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব থেকে
বর্ণনা করেন ৷ আব্বাস (রা) বলেছেন : হুনায়ন যুদ্ধে আমি রাসুলুল্লাহ (না)-এর সাথে অংশ গ্রহণ
করি ৷ আমি ও আবু সুফিয়ান ইবন হারিছ সর্বক্ষণ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে থাকি ৷ কখনও তার
থেকে পৃথক হইনি ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার সাদা রং-এর খচ্চরের উপর থাকেন ৷ এ খচ্চরঢি তাকে
ফারওয়া ইবন নৃফাছা আল-জুযামী উপচৌকন স্বরুপ দান করেছিলেন ৷ যুদ্ধ শুরু হলে মুসলমানরা
পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করে ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার খচ্চরটিকে কাফিরদের দিকে এগিয়ে
নেন ৷ আব্বাস (রা) বলেন, খচ্চরটি যাতে দ্রুত না চলে সে জন্যে আমি তার লাণাম ধরে টেনে
রাখি ৷ আর আবু সুফিয়ান রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর রিকাব ধরে রাখেন ৷ রাসুলুস্লাহ্ (না) তখন
আব্বাসকে বললেন : তুমি হুদায়বিয়ার বাবলা বৃক্ষের নীচে বায়আত গ্রহণকারীদেরকে আহ্বান
কর ৷ আব্বাস (রা) বলেন, ণাভী যেমন তার বাছুরকে সােহাগের জন্য ছুটে যায়, তেমনি আমার
আওয়ায শুনার পর তারা ছুটে আসে যেন আমি তাদের প্রতি অনুরুপ সোহাপ প্রকাশ করেছি ৷ তারা
জবাবে বললো আমরা হাযির, আমরা হাযির ৷ তারা এসে কাফিরদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় ৷
আনসারদের আহ্বান করে বলা হয় হে আনসার সম্প্রদায় ! এরপর
নির্দিষ্টভারে বনুল হারিছ ইবন খাযরাজকে হে বনুল হারিছ বলে আহ্বান করা হয় ৷ এ সময়
রাসুলুল্লাহ্ (সা) খচ্চরের উপর থেকে মাথা উচু করে রণক্ষেত্রের দিকে তাকান এবং যুদ্ধ প্রত্যক্ষ
করেন ৷ তখন তিনি বলেন, এখন হচ্ছে যুদ্ধের সব চাইতে উত্তেজনাকর অবস্থা ৷ এরপর তিনি
কিছু কংকর হাতে নিয়ে সেগুলো কাফিরদের প্রতি নিক্ষেপ করেন ৷ তারপরে বললেন, মুহামাদ্দের
প্রতিপালকের কসম ! ওরা পরাজিত হয়েছে ৷ আব্বাস বলেন, তখন আমি স্বচক্ষে দেখার জন্যে
যুদ্ধ ক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে গেলাম ৷ দেখলাম, যুদ্ধ তার আপন অবস্থায় আছে ৷ আব্বাস বলেন,
আল্লাহর কসম ! রাসুলুল্পাহ্ (সা) যখন কাফিরদের দিকে কংকর নিক্ষেপ করেন, তখন থেকে
দেখলাম, তাদের যুদ্ধের গতিতে তটি৷ পড়েছে, তলােয়ারের ধার ভৌতা হয়ে গিয়েছে এবং ময়দান
ছেড়ে পেছনের দিকে ধাবিত হচ্ছে ৷ ইমাম মুসলিম এ হাদীছ আবু তাহিরের সুত্রে ইবন ওহব
থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ এ ছাড়াও তিনি মুহাম্মাদ ইবন রাফি আবদুর রায্যাক মামার
সুত্রে যুহ্রী থেকেও অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম মুসলিম ইকরামা ইবন আমার সালামা ইবন আকওয়া থেকে বর্ণনা করেন যে,
তিনি বলেছেন, আমরা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে হুনায়নের যুদ্ধ করেছি ৷ শত্রুদের সম্মুখীন হলে
আমি একটু অগ্রসর হয়ে একটি টিলার উপর আরোহণ করি ৷ তখন মুশরিক পক্ষের এক লোক
আমার মুকাবিলায় আসে ৷ আমি তাকে লক্ষ্য করে একটি তীর নিক্ষেপ করি ৷ কিন্তু সে আমার
দৃষ্টির আড়াল হয়ে যায় ৷ আমি বুঝতে পারলাম না যে, তীর নিক্ষেপের ফলাফল কি হয়েছে ৷
তারপর শত্রুদলের প্ৰতি লক্ষ্য করে দেখলাম যে, তারা অপর একটি টিলার উপর আরোহণ
করেছে ৷ এ সময় তারা ও রাসুল (না)-এর সাহাবীগণ পরস্পর মুখোমুখি হন ৷ তখন নবীর
সাহাবীগণ পিছন দিকে সরে যেতে লাপলেন ৷ আমি পরাজিত অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করলাম ৷ আমার
পরিধানে ছিল দুটি চাদর ৷ একটি সাি লুঙ্গিরুপে, অপরটি চাদররুপে ব্যবহৃত ৰু এক পর্যায়ে আমার
পরিধেয় লুঙ্গি খুলে যায় ৷ আমি সেটি ভালরুপে বেধে নিলাম এবং পরাজিত মন নিয়ে রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর কাছ দিয়ে গমন করলাম ৷ তখন তিনি তার সাদা রংএর খচ্চরের উপর আরোহণ
করেছিলেন ৷ তিনি বললেন, ইবনুল আকওয়া ভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়েছে ৷ ’ এরপর শত্রুরা যখন
চারদিক থেকে রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে ঘিরে ফেলে, তখন তিনি তার খচ্চরের উপর থেকে নিচে
অবতরণ করেন ৷ তারপর এক মুঠো মাটি হাতে নিলেন এবং (তাদের মুখমণ্ডল
বিবর্ণ হোক) বলে তাদের মুখমণ্ডলে নিক্ষেপ করলেন ৷ দেখা পেলা ঐ এক মুঠো মাটিতে তাদের
সকলের দৃ’চােখ ভরে গেল ৷ আল্লাহ্র ইচ্ছায় একজনও এ থেকে বাদ থাকল না ৷ ফলে তারা
পরাজিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করলো ৷ এভাবে আল্লাহ্ তাদেরকে পরাজিত করে দেন ৷
শেষে রাসুলুল্লাহ্ (সা) মুসলমানদের মধ্যে গনীমতের মাল বণ্টন করে দেন ৷
আবুদাউদ তায়ালিসী তার মুসনাদ গ্রন্থে হাম্মাদ ইবন সালমার সুত্রে আবু আবদুর
রহমান ফিহ্রী থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, হুনায়ন যুদ্ধ অভিযানে আমরা রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর সংগে ছিলাম ৷ প্রচণ্ড গরমের সময় আমাদের এ সফর হয়েছিল ৷ তাই সফরে বিরতি
দিয়ে আমরা একটি বাংলা গাছের ছায়ায় অবতরণ করি ৷ সুর্য পশ্চিমে গড়িয়ে যাওয়ার পর আমি
বর্য পরিধান করে ও ঘোড়ার আরোহণ করে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট যইি ৷ এ সময় তিনি তার
তাবুতে অবস্থান করছিলেন ৷ আমি সেখানে পৌছে তাকে সা ৷লাম জানিয়ে বললাম
তারপরে বললাম, ইয়া রাসুলাল্পাহ্ ! পুনরায়
যাত্রা শুরু করার সময় হয়েছে ৷ তিনি বললেন, ভুা৷ত তাই ৷ তখন তিনি বিলালকে ডাক দেন ৷ তার
ডাক শুনে বিলাল বাবলা গাছের নিচ থেকে ঠিক যেন পাখির ন্যায় উড়ে এসে বললেন, ইয়া
রাসুলাল্লাহ্ ! আমি আপনার খিদমতে হাযির ! আপনার জন্যে আমি উৎসর্গ ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বললেন : আমার জন্যে আমার ঘোড়াকে জিন লাগিয়ে প্রস্তুত কর ৷ বিলাল চটের একটি আসন
নিয়ে আসলেন যার মধ্যে খেজুর গাছের ছাল ভরা ছিল ৷ নরম ও কোমল জাতীয় কিছুই তাতে
ছিল না ৷ এরপর তিনি তার ঘোড়ার উপর আরোহণ করলেন ৷ এক দিন চলার পর আমরা শত্রুর
সম্মুখীন হই ৷ ঘোড়সওয়ার বাহিনী তাদের ঘোড়াগুলোকে খাওয়ানাের জন্যে মাঠে নিয়ে যায় ৷
আমরা শত্রুদের মুকাবিলা করি ৷ কিংন্থ মুসলমানরা এক পর্যায়ে যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে পলায়ন করে ৷
যার বর্ণনা আল্লাহ তাআলা কুরআনে দিয়েছেন ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (না) বলতে লাগলেন : “হে
আল্লাহর বন্দোরা ! আমি আল্লাহর বান্দ৷ ও তীর রাসুল ৷” এ কথা বলে তিনি ঘোড়া থেকে অবতরণ
করেন ৷ রাবী বলেন, আমার চাইতে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর অধিক নিকটে থাকা এক ব্যক্তি আমার
নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) এক মুঠো মাটি হাতে নিয়ে প্রুশু৷ ৷ :া১এে বলে
শত্রুদের মুখমন্ডলের দিকে নিক্ষেপ করেন ৷ ইয়া’লা ইবন আতা বলেন, ঐ যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী
যােদ্ধাদের সন্তানরা তাদের পিতাদের বরাত দিয়ে আমাদের কাছে বর্ণনা কারহ্নেব্ক্ত যে, শত্রুপক্ষেব
এমন কেউ অবশিষ্ট জ্যি না যার চোখ-মুখ ঐ মাটি দ্বারা পরিপুর্ণ না হয়েছিল ৷ তারা বলেছেন,
আমরা আকাশ থেকে একটি ঝনঝন আওয়ায শুনতে পাই ৷ লোহার থালার উপর দিয়ে এক খণ্ড
লোহা গড়িয়ে দিলে যে রকম আওয়ায হয় ঐ আওয়াযটি ছিল ঠিক এ আওয়াষের মতই ৷
অবশেষে আল্লাহ্ তাদেরকে পরাজিত করেন ৷ আবু দাউদ সিজিসতানী তীর সুনান গ্রন্থে মুসা ইবন
ইসমাঈলেব সুত্রে হামাদ ইবন সালাম! থেকে এ ঘটনা অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম আহমদ আফ্ফান সুত্রে আবল্লোহ্ ইবন মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বল্যেছা, হুনায়ন দিবসে আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সংগে ল্পিাম ৷ এক পর্যায়ে মুসলিম মুজাহিদ্যা
তাকে রেখে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যায় ৷ তবে মুহাজির ও আনসাবদের মধ্য থেকে মাত্র
আশি জ্যা ণ্লাক তীর কাছে থেকে যান ৷ আর আমরা কিছু সংখ্যক লোক আশি কদম পিছিয়ে
গিয়ে অবস্থান করি ৷ তবে আমরা পিট ফিরিয়ে চলে যাইনি ৷ উক্ত আশি জনের উপর আল্লাহ্
প্রশান্তি নাযিল করেন ৷ ইবন মাসউদ বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তীর খচ্চরে আরোহণ করে কয়েক
কদম অগ্রসর হন ৷ ৰিক্ষ্ম খচ্চরটি তাকে নিয়ে আকরািকা হয়ে চলে ৷ ফলে তিনি জিন থেকে
কিছুটা ঝুকে পড়েন ৷ আমি তখন বললাম, “ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি সোজা হয়ে মাথা উচু
করুন ৷ আল্লাহ্ আপনাকে উপরে উঠাবেন ৷ তিনি বললেন : “আমার কাছে এক মুঠো মাটি
দাও ৷” এরপর তার হাতে এক মুঠো মাটি দেওয়ার পর তিনি তা শত্রুদের মুখের দিকে ছুড়ে
মারেন ৷ ফলে দেখা গেল তাদের সকলের চোখ সে মাটিতে ভরে গিয়েছে ৷ এরপর তিনি
জিজ্ঞেস করলেন : মুহাজির ও আনসাররা ণ্কাথায় ?” আমি বললাম, “ঐ (তা তারা ওখানে
আছেন ৷” তিনি বললেন, তাদেরকে এখানে আমার জন্যে আওয়ায দাও ৷” আমি আওয়ায
দিলাম ৷ আওয়ায শুনে তীরা চলে আসলেন ৷ তীদ্যে৷ ডান হাতে ছিল তলোয়ার ৷ তলোয়ারগুলো
ছিল সাদা-কাল মিশ্রিত উজ্জ্বল চকচকে ৷ এ সময় মুশরিকরা পচাৎ দিকে পলায়ন করে ময়দান
ত্যাগ করে ৷ ইমাম আহমদ উক্ত সনদে একইি এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম বায়হাকী আবুআবল্লোহ হাফিয এর সুত্রে ইয়ায ইবন হারিছ আনসারী থেকে
বর্ণনা করেন যে, তিনি বালাছা, রাসুলুল্লাহ্ (সা) হক্তেরাযিনরুদঃ বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে বার
হাজার মুসলিম সৈন্যসহ আগমন করেন ৷ হ্না৷য়নের এ যুদ্ধে তায়েফের অধিবাসীদের মধ্য হতে
যারা নিহত হয়, তাদ্যে৷ সংখ্যা ছিল বদর যুদ্ধে নিহত মুশব্লিকদের সংখ্যার অনুরুপ ৷ রাৰী ইয়ায
বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) এক মুঠাে কংকর হাতে নিয়ে তা আমাদের মুখমণ্ডলের দিকে নিক্ষেপ
করেন ৷ এর ফলে আমাদের পরাজয় অনিবার্ষ হয়ে দাড়ায় ৷ ইমাম বুখারী তার ইতিহাস গ্রন্থে এ
হাদীছ উল্লেখ করেহ্নো ; কিংস্থ সেখাৰ্ন ইয়ায়ের নাম নেই ৷
মুসাদ্দাদ বলেন, আমাদের কাছে জাফর ইবন সুলায়মান, হুনায়ন যুদ্ধে কাষিস্মদের পক্ষে
অৎশগ্রহণকারী আনক ব্যক্তি বর্ণনা করেন, “আমরা ও রাসুলুল্লাহ্র বাহিনী যখন পরস্পর মুখোমুৰী
হই, তখন তারা আমাদের মুকাবিলায় বকরী দােহন করার সময় পর্যন্ত টিকতে পারেনি ৷ এরপর
আমরা রাসুলুল্লাহ্ (সা)এর সম্মুখে গিয়ে আমাদের তলােয়ার প্রদর্শন করতে থাকি ৷ এক পর্যায়ে
আমরা র্তাকে সম্পুর্ণভাবে ঘিরে ফেলি ৷ হঠাৎ দেখি, আমাদের ও তার মাঝে কয়েকজন উজ্জ্বা
চেহারা বিশিষ্ট লোক দীড়িয়ে আছেন ৷ তীর! বললো : ষ্,শু৷ ৷ গ্রা; ওদ্যে৷ চেহারা ৰিবর্ণ হয়ে
যাক ৷ তোমরা ফিরে যাও ৷ তাদের এ কথায় আমাদের পরাজয় ঘটে ৷ বায়হাকী এ হাদীছ বর্ণনা
করেছেন ৷
ইয়া’কুব ইবন সুফিয়ান বলেন, আবু সুফিয়ান হারিছ ইবন বদল নাসরীর সুত্রে তার
গোত্রের এমন এক ব্যক্তির থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি হ্নাহ্য়নের এ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল
এবং আমর ইবন সুফিয়ান ছাকাফী থেকে বর্ণনা করেন ৷ উভয়ে বলেন : হুনায়ন যুদ্ধে মুসলমানরা
পরাজিত হয়ে যায় এবং রাসুলুল্লাহ্র সাথে আব্বাস ও আবু সুফিয়ান ইবন হারিছ ব্যতীত আর
কেউ ছিল না ৷ এ সময় তিনি এক মুঠো কংকর নিয়ে শত্রুদের মুখের দিকে নিক্ষেপ করেন ৷
এরপর আমরা পরাজয় বরণ করি ৷ এরপর মুসলিম অশ্বাস্থরাহিগণ প্রতিটি পাথর ও বৃক্ষের আড়ালে
আমাদেরকে খুজতে থাকে ৷ন্ আমর ইবন সুফিয়ান ছাকাফী বলেন, আমি আমার ঘোড়ার চড়ে
পালিয়ে তায়েফে চলে যাই ৷
ইউনুস ইবন বুকায়র তার মাগাষী গ্রন্থে ইউসুফ ইবন সৃহায়ব ইবন আবদুল্লাহর সুত্রে বর্ণনা
করেন যে, হুনায়ন যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে একজন মাত্র লোক ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট
ছিল না ৷ সে ব্যজিং নাম ছিল যায়দ ৷
ইমাম বায়হাকী কাদীমীর সুত্রে ইয়াযীদ ইবন আমির সুওয়াইর থেকে বর্ণনা করেন যে
তিনি বলেছেন : হ্লায়ন যুদ্ধে মুসলমানরা যখন ময়দান খালি করে পলায়ন করফ্লি তখন কাফিররা
তাদের পশ্চাদ্বাবন করেছিল ৷ এ সময় রাসুলুল্লাহ্ (সা ) যমীন থেকে এক মুঠো মাটি নিয়ে
মুশরিকদের সম্মুখে গিয়ে তাদের মুখমণ্ডলের দিকে নিক্ষেপ করেন এবং বলেন “ণ্তামরা ফিরে
যাও ৷ তোমাদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে যাক ৷ এরপর তাদের একজনের সাথে অন্য জনের সাক্ষাৎ
হলেই তারা চোখে ধুলাবালি যাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছে ৷ এরপর ৰায়হাকী দুটি পৃথক সুত্রে আবু
হুযায়ফা থেকে যুদ্ধের কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেন ৷ তার একটি সুত্রে আবু হুযায়ফা সাইব
ইবন ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি ইয়াযীদ ইবন আমির সুওয়ায়ী থেকে
শুনেছি, আর সে হ্লায়ন যুদ্ধে মুশরিক দলের অন্তর্ভুক্ত ছিল ৷ পরে সে ইসলাম গ্রহণ করে ৷ রাবী
বলেন, আমরা তাকে জিজ্ঞেস করতাম যে, হুনায়ন যুদ্ধে আল্লাহ্ মুশরিকদের অম্ভরে যে ভীতির
সঞ্চার করেছিলেন তা কেমন ছিল ? এর জৰাবটা বাস্তবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যে ইয়াযীদ ইবন
আমির কিছু কংকর হাতে নিয়ে তামার থালার উপর নিক্ষেপ করতেন ৷ এতে থালা ঝনঝন করে
উঠলে তিনি বলতেন, ভরের কারণে আমরা অস্তরে এরকম ঝনঝন শব্দ অনুভব করতাম ৷
বায়হাকী বলেন : আবুআবল্লোহ্হাফিয ও মুহাম্মাদ ইবন মুসা ইবন ফযল — দৃজ্যনই শায়বা
থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন : আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সংগে হুনায়ন যুদ্ধে যাই ৷
তবে আল্লাহ্র কসম ! আমি মুসলমান হয়েও যাইনি কিত্বা ইসলামের অনুরক্ত হয়েও যাইনি ৷ বরং
আমি গিয়েচিহ্লাম এ জন্যে যে, আমি চাজ্জিহ্বম না হাওয়াষিনরা ক্যুায়শদের উপর জয়লাভ ককক ৷
যুদ্ধের কোন এক মুহুর্তে আমি রাসুলুল্লাহ্র কাছে দাড়িয়ে ছিলাম ৷ তখন আমি তাকে বললাম , ইয়া
রাসুলাল্লাহ্৷ আমি একটি সাদা কাল মিশ্র বর্ণের ঘোড়া দেখতে পাচ্ছি ৷৩ তিনি বললেনং হে শায়বা !
এ ঘোড়া তো কাফির ছাড়া অন্যরা দেখতে পায় না ৷ এরপর তিনি তার পবিত্র হাত আমার বুকের
উপর রেখে বললেনঃ হ্ : া৫ ৷ ণ্ৰুা৷ ৷ — হে আল্লাহ ! শায়বাকে সঠিক পথ দেখাও ৷ এরপর
তিনি দ্বিতীয়বার হাত রেখে ঐ দু আ করলেন — হে আল্লাহ ! শায়বাকে হিদায়াত কর ৷ তারপরে
৩তীয়বারতৃ তিনি আমার বুকে হাত রেখে একই দু আ করলেন হে আল্লাহ ! শায়ৰাকে সত্য
পথের সন্ধান দাও ৷ শায়বা বলেন, আল্লাহর কসম ! তৃতীয়বার হতে উঠিয়ে নেয়ার পর আমার
মনে হল, আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে তার থেকে অধিক প্রিয় আমার কাছে অন্য কেউ নেই ৷
এরপর তিনি একে একে উভয় পক্ষের মুখোমুখী হওয়া, মুসলমানদের পলায়ন, আব্বাসের
আহ্বান এবং রাসুলুল্লাহ্র সাহায্য প্রার্থনার কথা উল্লেখ করে বলেন, অবশেষে আল্লাহ মুশরিকদের
পরাজিত করে দেন ৷
বায়হাকী বলেন, আমার নিকট আবুআবদৃল্লাহ হাফিয শায়বা ইবন উছমান থেকে
বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, হুনায়ন দিবসে রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে আমি একাকী নিরাপত্তাহীন
অবস্থায় দেখতে পইি ৷ এ সময় আলী ও হামযার হাতে আমার পিতা ও চাচার নিহত হওয়ার কথা
স্মরণ পড়ে যায় ৷ আজকের এ সুযোগে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর উপর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে আমার
অন্তর উতলা হয়ে ওঠে ৷ শায়বা বলেন, এ উদ্দেশ্যে ডান দিক থেকে আমি তার কাছে যাওয়ার
চেষ্টা করি ৷ কিন্তু দেখলাম সেখানে আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা) সাদা রংয়ের বর্ম পরে
দীড়িয়ে আছেন ৷ বর্মটি এমন সাদা যে, দেখতে মনে হয় তা রৌপ্য নির্মিত কোন ধুলাবালি তাতে
জমতে পারছে না ৷ মনে মনে ভাবলাম, আব্বাসতো তার চাচা ৷ তিনি তাে তার কোন ক্ষতি হতে
দিবেন না ৷ শায়বা বলেন, এরপর আমি বাম দিক থেকে তীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি ৷ কিন্তু
সেখানে গিয়ে আবু সুফিয়ান ইবন হারিছ ইবন আবদুল মুত্তালিবকে দেখতে পাই ৷ এবারও মনে
মনে ভাবলাম , ইনিও তো তার আর এক চাচাভাে ভাই ৷ তার কোন অনিষ্ট করতে সুযোগ দিবেন
না ৷ এরপর আমি পশ্চাৎ দিক থেকে তার কাছে চলে যইি ৷ এখানে কোন বাধা না থাকায় আমি
তলোয়ার দ্বারা আঘাত করার প্রস্তুতি নেই ৷ এর মধ্যেই হঠাৎ দেখি আমার ও তার মাঝে
আগুনের এক লেলিহান শিখা উচু হয়ে আছে ৷ মনে হল এ এক বিদ্যুতের ঝলক ৷ আমার ভয় হল
যে, এ শিখা আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিবে ৷ ভয়ে আমি হাত দ্বারা চোখ ঢেকে ফেলি এবং পিছু
হটে চলে আসি ৷ এমন সময় রাসুলুল্লাহ্ (সা) আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন : “হে শায়বা !
আমার কাছ এসো ৷ হে আল্লাহ ৷ তার থেকে শয়তানকে দুর করে দাও : শায়বা বলেন, তখন
আমি তার পানে চোখ উঠাতেই মনে হলো তিনি আমার কাছে আমার চোখ কান অপেক্ষাও
অধিক প্রিয় ৷ তারপর তিনি বললেন : “হে শায়বা ! এখন কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াই কর ৷
ইবন ইসহাক বলেন : আবদৃদৃদার গোত্রের শায়বা ইবন উছমান ইবন আবু তালহা বলেন ,
“হনায়ন যুদ্ধের দিন আমি ভাবলাম, রক্তের প্ৰতিশোধ গ্রহণের আজ সুবর্ণ সুযোগ ৷” উহুদ যুদ্ধে
তার পিতা নিহত হয়েছিল ৷ তিনি বলেন, “তার প্রতিশোধে আজ আমি মুহাম্মাদকে হত্যা করবো ৷
এ উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ্কে হত্যা করার জন্যে আমি সম্মুখে এগিয়ে যাই ৷ হঠাৎ দেখি কি একটা
জিনিস আমার সামনে এসে বাধা দিল এবং আমার অত্তরকে আচ্ছন্ন করে ফেললো ৷ ফলে আমি
উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারলাম না ৷ এতে আমি বুঝলাম যে, কোন অদৃশ্য শক্তি আমাকে এ কাজ
করতে বাধা দিচ্ছে ৷
মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক বলেন, তার পিতা ইসহাক জুবায়র ইবন মুতইম সুত্রে বর্ণনা
করেন যে , জুবায়র বলেছেন, হনায়ন দিবসে আমরা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে হ্নিা৷ম ৷ মুসলিম
বাহিনী ও মুশরিকদের মধ্যে লড়াই চলজ্যি ৷ তখন আমি লক্ষ্য করে দেখি, আসমান থেকে কাল
চাদরের মত কিছু একটা নিচে নেমে আসছে ৷ অবশেষে তা আমাদের ও শত্রুদের মধ্যখানে
পতিত হলো ৷ আমি চেয়ে দেখি, অসংখ্য পিপিলীকা চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গোটা উপত্যকা
(হয়ে গেছে ৷ শত্রুদের বিপর্যয় না হওয়া পর্যন্ত তারা স্থান৩ ত্যাগ করেনি ৷ এরা যে মুলত৪
ফেরেশতা তাতে আমাদের আর কোন সন্দেহ ছিল না ৷ ইমাম বায়হাকী হাকিমের সু —
ইবন ইসহাক থেকে অনুরুপ বর্ণনা করোছা ৷ বায়হাকীর বর্ণনায় অতিরিক্ত খদীজ ইবন আজো
নাসরীর নিম্নোক্ত কবিতা উল্লেখ ব্ব৷ হয়েছে
“আমরা যখন হনায়ন ও তার পানির নিকটবর্তী হলাম তখন সাদা-কাল নানা প্রকার কুশ্ৰী
বর্ণের মানব দেহ দেখতে পেলাম ৷
তারা ছিল সাদা ঝলমলে অস্ত্রধারীদ্যে৷ সাথে ৷ যদি তারা ওদ্দেরকে আরওয়া পর্বতের শীর্ষে
নিক্ষেপ কংাতাে তবে তা সমতল স্থানে পরিণত হয়ে যেত ৷
আমার সম্প্রদায়ের সর্দারগণ যদি আমার কথা মােন নিত ৷ তাহলে আমাদের এ দৃরবস্থার
সম্মুখীন হতে হতো না ৷
আর মুহাম্মাদ পরিবারের আশি হাজার লষ্করের মুকাবিলা আমাদের বল্পাত হতো না ৷ যারা
সাহায্য পেয়েহ্নিড়া খিনদিফ ণ্গাত্রেরও ৷
ইবন ইসহাক বলেন : হনায়ন যুদ্ধ তীব্ৰভাবে চলাকালে হাওয়াষিন নেতা মালিক ইবন আওফ
নিম্নোল্লিবিত উদ্দীপক কবিতা বলেন :
“হে আমার ঘোড়া যুহাজ ! এগিয়ে যাও, আজ বড়ই বিভীষিকাময় দিন ৷ এমন দিলেই আমার
মত লোক তোমার মত ঘোড়ার চড়ে আত্মরক্ষা করছে এবং একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে
যাচ্ছে ৷
যুদ্ধের দিন যখন সৈন্য ব্যুহ ভেৎগে যায় ও পশ্চাদপদ হয়, তখন দলের পর দল ধ্বংস হয়ে
যায় ৷
সে বিশাল সৈন্য বাহিনী যা দেখে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে ৷ আমি বল্লম নিক্ষেপ করে এমনভাবে
ক্ষত করি, যা সুক্ষ্ম চেহারাকে বিকৃত করে দেয় ৷
গৃহ কোণে অবস্থানকারীকে যখন নিন্দাৰাদ করা হয়, তখন আমি বর্শা দ্বারা এমনভাবে
বিরাটকায় যখম করে দিই যা অত্যন্ত গভীর হয় ও সেখান থেকে আওয়ায বের হয় ৷
সে ক্ষত স্থান থেকে রক্তের ধারা বের হয়ে আসে ৷ কখনও তা ক্ষত স্থানে পরিপুর্ণ হয়ে যায় ৷
আবার কখনও প্রবাহিত হতে থাকে ৷
বল্লমের ফলা ভেৎগে ক্ষতের মধ্যে রয়ে যায় ৷
তখন আমরা ডেকে ডেকে বলি, “হে যায়ন ! “হে ইবন হামহাম ! কোথায় পালিয়ে যাচ্ছে!
মাড়ির দাত বিদায় নিয়েছে ৷ বয়স ও অনেক বেড়ে গিয়েছে ৷ এ বিষয়ে দীর্ঘ কাপড়
পরিধানকাৰী সুন্দরী ণ্নকাবধারী রমগীরা ভালভাবে অবগত আছে ৷
আমি অনুরুপ ঘায়েল করার কাজে ভুল করি না
যখন পর্দানশীল নারীরা তাদের পর্দা থেকে বের হয়ে আসে তখনও ৷
ইমাম বায়হাকী ইউনুস ইবন বুকায়র সুত্রে আবু ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন যে, মালিক
ইবন আওফেৱ দলবল পরাজিত হয়ে পলায়ন করলে সে ইসলাম গ্রহণের পর নিম্নের কবিতাটি
বলেছিল ৷ তবে কেউ কেউ বলেছেন, কবিতাটি মালিকের নয়, অন্য কারও হবে ৷
“তাদের সফরের কথা স্মরণ কর, যখন লোকজন সবইি উপস্থিত ছিল ৷ আর মালিকের উপর
তখন পতাকা পতপত করে উড়ছিল ৷
মালিক সে তো মালিকই ৷ হুনায়নের দিন তার উপরে আর কেউ ছিল না ৷ তার মস্তকে
মুকুট শোভা পাচ্ছিল ৷ এভাবে যুদ্ধের সময় তারা প্রতিপক্ষের মুকাবিলায় অগ্রসর হল ৷ তাদের
সাথে কাি শিরস্ত্রাণ, বর্ম ও কাঠ বিহীন চামড়ার ঢাল ৷
এ অবস্থায় তারা প্রতিপক্ষের উপর আঘাত হানলো ৷ এক পর্যাশ্নে তারা নবীর পাশে কাউকে
দেখতে পেল না ৷ এমন কি ধুলোর আধারে তিনি আচ্ছন্ন হয়ে যান ৷
এরপর জিবরীল ফোরশতা তাদের সাহায্যার্থে অবতরণ করেন ৷ অবশেষে আমরা পরাজিত
হয়ে বন্দী হই, আর কতক পলায়ন করি ৷
যদি জিবরীল ব্যতীত অন্য কেউ আমাদের সাথে যুদ্ধ করতো, তা হলে অবশ্যই আমাদেরকে
হিফাযত করতো আমাদের উন্নত তরবড়ারিগুলো ৷
তারা যখন পরাজিত হয়ে পলায়ন করছিল, তখন উমর ফারুক বর্ণার আঘাতে যখন হয়ে
যান ৷ সে যখমের রক্তে তার বাহনের জিং রঞ্জিত হয়ে যায় ৷”
ইবন ইসহাক বলেন, মুশরিক বাহিনী যখন পরাজিত হয় এবং আল্লাহ্ তার রাসুলকে বিজয়
দান করেন, তখন জনৈক মুসলিম রমণী কবিতায় বলেন :
“আল্লাহ্র অশ্বারোহী বাহিনী জয়লাভ করেছে লাভ দেবতার অশ্বারোহী বাহিনীর উপর ৷
আল্লাহ্ই চিরস্থায়ী ৷
ইবন হিশাম বলেন, কোন কোন বর্ণনাকারী আমার নিকট উক্ত পংক্তিটি নিম্নোক্তভাবে বর্ণনা
করেছেন :
“আল্লাহ্র অশ্বারােহী দল লাত দেবতার অশ্বারোহী দলের উপর বিজয় লাভ করেছে ৷ আর
আল্পাহ্ব অশ্বারোহী বাহিনীই টিকে থাকার অধিক যোগ্য ৷
ইবন ইসহাক বলেন : হাওয়াযিন বাহিনীর পরাজয়ের পর বনু মালিকের শাখা ছাকীফ গোত্রে
হত্যাকান্ড চালানো হয় ৷ তাদের সত্তরজন সৈন্য পতাকা তলেই নিহত হয় ৷ তাদের পতাকা ছিল
যুল-খিমারের হাতে ৷ যুল-খিমার নিহত হলে উছমান ইবন আবদুল্লাহ ইবন রাবীআ ইবন হারিছ
ইবন হাবিব পতাকা ধারণ করে ৷ পতাকা হাতে নিয়ে যুদ্ধ করতে করতেই সে নিহত হয় ৷ ইবন
ইসহাক বলেন : আমির ইবন ওহ্ব ইবন আসওয়াদ আমাকে জানিয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
নিকট উছমানের নিহত হওয়ার সংবাদ পৌছলে তিনি বলেছিলেন :
“আল্লাহ্ তাকে রহমত বঞ্চিত করে দিন ৷ সে কুরায়শদের প্রতি অতিশয় ৰিদ্বেষ পোষণ
করতো ৷ ইবন ইসহাক ইয়াকুব ইবন উত্বার বরাতে উল্লেখ করেন যে , আলোচ্য উছমানের
সাথে তার এক খৃষ্টান ণ্গালামও নিহত হয় ৷ জনৈক আনসারী এসে তার পরিধেয় জিনিসপত্র খুলে
নেয়ার উদ্যোগ নেন ৷ কিন্তু তিনি দেখতে পান যে, গোলামটি খাত্নাহীন ৷ এ দেখেই তিনি
চিৎকার করে আওয়ায দিলেন, হে আরব সমাজ ! ছাকীফ ণ্গাংত্রর লোকেরা খাত্না করার না ৷
মুগীরা ইবন শু’বা ছাকাফী বলেন, আমার আশংকা হলো আরব সমাজ থেকে আমাদের
মান-সম্মান সবই বিলীন হয়ে যাবে তইি আমি তার হাত ধরে বললাম, দেখ ! এমন কথা আর
প্রচার করো না ৷ আমার পিতা-মাতা তোমার প্রতি উৎসর্গ হোন ৷ ও তো আমাদের খৃষ্টান গোলাম ৷
এরপর আমি (মুগীরা) অন্যান্য নিহতদের কাপড় উঠিয়ে তাকে বললাম : এদেরকে দেখ, এরা
সবাই খাত্নাকৃত ৷ ইবন ইসহাক বলেন : এ যুদ্ধে মিত্র গোত্রসমুহের পতাকা ছিল কারিব ইবন
আসওয়াদের হাতে ৷ পরাজয়ের পরই সে তার পতাকাটি একটি পাছেঃশ্ব সাথে ঠেস দিয়ে রেখে
তার চাচাত ভাই ও গোত্রের লোকজন নিয়ে পালিয়ে যায় ৷ এ কারণে মিত্র গােত্রসমুহের মধ্যে
কেবলমাত্র দু’জন লোক ছাড়া অন্য কেউ নিহত হয়নি ৷ তাদের একজন হল গায়রা গোত্রের ওহব,
আর অপরজন বনুকুব্বাহ গোত্রের জালাহ ৷ জালাহের নিহত হওয়ার সংবাদ শুনে রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বলেন, ছাকীফ গোত্রের যুবক নেতা আজ শেষ হলো ৷ কিন্তু ইবন হানীদা অর্থাৎ হারিছ ইবন
উওয়ায়েস এখনও রয়ে গেল ৷ ইবন ইসহাক বলেন : কারিব ইবন আসওয়াদের ভাইদের রেখে
পলায়নপুর্বক আত্মরক্ষা করা এবং যুল-খিমার ও তার গোত্রের লোকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে
দেওয়ার কথা উল্লেখ করে আব্বাস ইবন মিরদাস নিম্নোক্ত কবিতা বলেন :
“ওহে কে আছে আমার পক্ষ থেকে গায়লানকে পয়পাম পৌছে দিতে ? তবে আমার ধারণা,
খুব শীঘ্নেই কোন ভাল জানাশোনা লোক তার কাছে এসে পৌছবে ৷
একই সাথে উৱওয়াকেও পৌছিয়ে দেবে ৷ আর আমি এমন একটা জবাব ও বক্তব্য
উপচৌকন দিব যা তেমােদ্যে৷ দুজনের বক্তব্য থেকে ভিন্ন ৷
তা হলো মুহাম্মাদ (সা) প্রতিপালকের ৰন্দো ও রাসুল ৷ তিনি ৰিপথগামী হন না এবং কারও
প্রতি যুলুমও করেন না ৷
আমরা র্তাকে মুসা (আ)-এর মতো নবী হিসেবে পেয়েছি ৷ যে কেউ তীর সাথে শ্রেষ্ঠত্বের
মুকাবিলা বহ্বৰে সে পরাজিত হয়ে ৷
ওজু প্ৰন্তোর ৰনু কাসী (ছাকীফ) সম্প্রদায়ের অবস্থা ছিল খুবই ণ্শাচণীয় যখন তাদের
আভ্যন্তরীণ বিষয়াদি বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল ৷
তাদের বিষয়াদি ও ক্ষমতা তারা নিজেরাই নষ্ট করে দেয় ৷ প্রাতাক সম্প্রদায়েৱই একজন
আমীর থাকে ৷ আর বিপদ আপদ ঘুরে ফিরে আবর্তিত হতে থাকে ৷
আমরা বনের সিংহের ন্যায় তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম ৷ আর ওদিকে আল্লাহ্ৱ বাহিনীগুষ্কলা
প্ৰকাশ্যভাবে অগ্রসর হচ্ছিল ৷
আমরা বানু কাসী বা হাওয়াযিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলাম
ক্রোধের সাথে ৷ আমাদের চলার গতি ছিল এত ভীব্র মনে হচ্ছিল যেন পাখীর ন্যায় উড়ে
চলজ্যিাম ৷
আমি কসম করে বলছি, তারা যদি থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত করতো, তা হলে আমরা সৈন্যদল
নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে যেতাম সে দল বিজয় না নিয়ে ফিরে আসভাে না ৷
তারপর আমরা লিয়্যা এলাকায় যেয়ে তথাকার সিংহের মত হয়ে যাই এবং সেখানে রক্তপাত
বৈধ করে নিই ৷ আর নসুর গোত্র আত্মসমর্পণ করে ৷
ইতিপুর্বে হুনায়নের নিকট এমন একটা দিন অতিবাহিত হয়েছে যে দিন তাদেরকে উচ্ছেদ
বলা হয়েছে এবং সেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়েছে ৷
সে দিনটি ছিল এমন ভয়াবহ যে , তোমরা অমন একটি দিনের কথা কখনও শুনতে পাওনি ৷
আর না শুনতে পেয়েছে কোন স্মরণীয় জাতি ৷
আমরা বনুহুতায়তকে উড়ন্ত ধুলোবালির মধ্যে তাদের পতাকার কাছে গিয়ে হত্যা করি ৷
আর তাদের প্রশস্ত বক্ষ বিশিষ্ট অশ্বগুলাে ছিল রশি দিয়ে বাধা ৷
সে সময় যুল-খিমার তাদের গোত্রের সর্দার ছিল না ৷ তাদের বিবেক বৃদ্ধির পরিণতি তারা
ভোগ করছিল ৷
সে তাদেরকে মৃত্যুর পথসমুহে দীড় করিয়ে দিয়েছে ৷ কিন্তু সে পথসমুহ দর্শনকারীদের
নিকট বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে গেছে ৷
তাদের মধ্যে যারা রক্ষা পেয়েছিল তারা দৃষ্টির আড়ালে নিচে পড়েছিল ৷ সেখান থেকে উঠার
শক্তি তাদের ছিল না ৷ আর তাদের বিপুল সংখ্যক লোককে হত্যা করা হয় ৷
অলস ও ধীর গতির লোকেরা কোন কাজেই ফলপ্রসু হয় না ৷ আর যারা দৃর্বলচেতা-
বিবাহ-শাদী করে না বা রমণী স্পর্শ করে না, তাদের দ্বারাও কোন কাজ হয় না ৷
সে তাদেরকে হত্যা করলো এবং নিজেও নিহত হল ৷ লোকজন তাকে নিজেদের
কাজ-কর্মের ক্ষেত্রে নেতা বানিয়ে নেয় এমন অবস্থায় যখন বীর-যােদ্ধারা শেষ হয়ে গিয়েছিল ৷
বনুআওফ, তাদের সাথে উত্তম ঘোড়াসমুহ উদ্দীপনার ঢৎগে চলতে থাকে ৷ এগুলোর জন্যে
প্রস্তুত থাকে তাজা ঘাস ও যব ৷
কারিব ও তার ভাইয়েরা যদি বিদ্যমান না থাকতো, তা হলে তাদের জমি-ক্ষেত ও
প্রাসাদগুলো ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যেত ৷
কিন্তু শাসন ক্ষমতা সাধারণত তাদের কাছেই অর্পণ করা হয় আশির্বড়াদ হিসেবে ৷ ইংগিত
দানকারী (অর্থাৎ রাসুল না) এ দিকেই ইংগিত করেছেন ৷
তারা কারিবের আনুগত্য করেছে ৷ অথচ তাদের রয়েছে এমন সব উত্তর পুরুষ ও জ্ঞানী-গুণী
ব্যক্তি যারা তাদেরকে মর্যাদার স্থানে পৌছে দিত ৷
যদি তারা ইসলামের দিকে আসার হিদায়াত পেয়ে যায়, তা হলে তারা লোক সমাজে মর্যাদার
আসনে অধিষ্ঠিত থাকবে যত দিন রাত্রির গল্পকারীরা গল্প করতে থাকবে ৷
কিন্তু যদি তারা ইসলামের দিকে না আসে ৷ তা হলে ধরে নেওয়া হবে, তারা আল্লাহ্র
বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ৷ তবে এ অবস্থায় তাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না ৷
যেমনটি আল্লাহ্র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বনু সাদকে চরম মুল্য দিতে হয়েছে এবং পাযায়্যা
গোত্রের লোকদেরকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে ৷
বনু মুআবিয়া ইবন বকরকে ইসলামের সামনে মনে হয় একটি বাছুর যেগুলো হলো হলো
করে ভাকছে ৷
তাই আমরা তাদেরকে বললাম , তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, আমরা তোমাদের ভাই ৷
আমাদের হৃদয় হিংসা-দ্বেষ থেকে মুক্ত পবিত্র ৷
যখন তারা আমাদের নিকট এসেছিল, তখন সন্ধি-চুক্তি হওয়া সত্বেও তাদের অন্তর বিদ্বেষে
অন্ধ ছিল ৷”
হুনায়ন যুদ্ধ পরবর্তী ঘটনা
হাওয়াযিন বাহিনীর পরাজয়ের পর তাদের নেতা মালিক ইবন আওফ নাসরী কিছু সংপী সাথী
নিয়ে একটি পিরিপথের উপর দাড়ায় ৷ তারপর সকলকে সম্বোধন করে ঘোষণা দেয় তোমরা
এখানে থাম, যারা দুর্বল তারা আগে চলে যাক ৷ আর যারা পিছনে রয়ে গেছে তারা এসে
তোমাদের সাথে মিলিত হোক ৷ ইবন ইসহাক বলেন : আমার কাছে এ রকম বর্ণনা পৌছেছে
যে, ঐ সময় একদল অশ্বারোহী বাহিনীকে আসতে দেখা যায় ৷ মালিক ও তার সংগীরা পিরিপথের
উপর ছিল ৷ মালিক তার সাথীদেরকে জিজ্ঞেস করলো, “তোমরা কী দেখতে পাচ্ছ ?” তারা
বল্লো, “আমরা দেখছি একদল লোক এ দিকে আসছে, তাদের বর্শাগুলো ঘোড়ার কানের কাছে
রাখা এবং তাদের পার্শ্বদেশ লম্বা ৷ ” তখন মালিক বললো, এরা বনু সুলায়মের লোক ৷ তাংদ্যা পক্ষ
থেকে তোমাদের উপর হামলা হওয়ার কোন আশংকা নেই ৷ দেখা গেল , তারা এসে উপত্যকার
নিম্ন ভুমির দিকে নেমে গেল ৷ এরপর তাদের পিছনে পিছনে আর একটি অশ্ব বাহিনীকে আসতে
দেখা গেল ৷ মালিক তার সংগীদের কাছে জিজ্ঞেস করলো, “তোমরা কী দেখতে পাচ্ছে৷ ৷ তারা
বললো, “আমরা দেখছি, একদল লোক তাদের বর্শাগুলো ঘোড়ার উপরে আড়াআড়িভাবে
এলোমেলাে করে রেখে দিয়েছে ৷ মালিক বললো, “এরা আওস ও খড়াযরাজ সম্প্রদায়ের
লোক ৷ এদের পক্ষ থেকেও তোমাদের উপর বিপদ আমার কোন আশংকা নেই ৷” তারপর এরা
যখন ঐ পিরিপথের কাছে এলো, তখন তারাও বনু সুলায়মের পথ ধরে চলে গেল ৷ এরপর
একজন অশ্বারোহীকে আসতে দেখা গেল ৷ তখন মালিক বললো, “এবার তোমরা কী দেখতে
পান্দো ? তারা জবাব দিল, “আমরা একজন অশ্বরোহীকে দেখছি ৷ তার পার্শ্বদেশ বেশ লম্বা ৷
বর্শা কাধে ঝুলান এবং একটি লাল কাপড় দ্বারা তার মাথা বাধা ৷ মালিক বললো , এ হচ্ছে
যুবায়র ইবন আওয়াম ৷ লাভ দেবীর কসম ৷ সে তােমাদেরকে হেস্ত-নেস্ত করবে, সুতরাং
তোমরা দৃঢ়ভাবে অবস্থান কর ৷ যুবায়র পিরিপথের সন্নিকটে এসে হাওয়াষিনদের দেখতে পেয়ে
তাদের দিকে এগিয়ে যান এবং বর্শা দ্বারা অব্যাহতডাবে আঘাত হোন তাদেরকে সেখান থেকে
দুরে হঢিয়ে দেন ৷
এরপর রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নির্দেশক্রমে গনীমতের মাল হিসেবে উট , (মন ও দাসদেরকে
একত্রিত করা হয় ৷ তিনি এণ্ডালাকে জি-ইবৃরানায় নিয়ে আটকে রাখার আদেশ দেন ৷ ইবন
ইসহাক বলেন : রাসুলুল্পাহ্ (সা) গনীমতের মাল সংরক্ষণের জন্যে মাসউদ ইবন আমর
গিফারীকে দায়িত্ব প্রদান করেন ৷
ইবন ইসহাক বলেন : আমার কোন এক সাথী আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ্
(সা) সে দিন চলার পথে দেখেন, এক মহিলার লাশ পড়ে আছে ৷ খালিদ ইবন ওয়ালিদ (রা)
তাকে হত্যা করেছেন ৷ লোকজন লাশটিকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে ৷ তখন তিনি তার এক সাহাবীকে
বললেন : “তুমি যাও, খালিদকে বল রাসুলুল্লাহ্ (সা) শিশু, নারী ও দিন মজুর লোক হত্যা
করতে তোমাকে নিষেধ করেছেন ৷ ” এটা ইবন ইসহাকের বিচ্ছিন্ন (মুনকাতি) সনদে বর্ণিত ৷
ইমাম আহমদ আবুআমিরের সুত্রে রাবাহ ইবন রাবী থেকে বর্ণনা করেন ৷ একদা
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন ৷ দলের অ্যাভাগে ছিলেন খালিদ ইবন
ওয়ালিদ ৷ চলার পথে রাবাহ ও অন্যান্য সাহাবী এক মহিলার লাশ দেখতে পান ৷ অগ্রভাগে যরাে
ছিলেন তারাই একে হত্যা করেছিলেন ৷ তারা সেখানে দাড়িয়ে লাশটি দেখতে লাগলেন এবং
মহিলার অবয়ব দেখে বিস্মিত হলেন ৷ কিছুক্ষণ পর রাসুলুল্লাহ্ (সা) ঘাহনে চড়ে সেখানে উপস্থিত
হন ৷ লোকজন লাশেৱ পাশ থেকে সরে যায় ৷ তখন নিহতের কাছে দীড়িয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বললেন : “এ মহিলা তাে যুদ্ধ করেনি ৷ এরপর তিনি জনৈক সাহাবীকে বললেন : তুমি গিয়ে
খালিদকে বল : সে যেন কোন শিশুকে কিংবা মজদুরকে হত্যা না করে ৷ আবু দাউদ, নাসাঈ ও
ইবন মাজা এ ঘটনাটি অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷
আওতাস যুদ্ধ
আওতাস যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার কারণ ছিল এই যে, হাওয়াযিন সম্প্রদায় পরাজয় বরণ করার
পর তাদের এক দল তায়েফে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে ৷ তাদের মধ্যে দলপতি মালিক ইবন আওফ
নাসয়ীও ছিল ৷ তায়েফের দুর্গের অভ্যন্তরে তারা অবস্থান নেয় ৷ আর এক দল লোক আওতাস
নামক স্থানে গিয়ে সমবেত হয় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) আবু আমির আশআরী ( রা)-এর নেতৃত্বে এক
দল সাহাবীর একটি বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন ৷ মুসলিম বাহিনী যুদ্ধ করে তাদেরকে
পরাজিত করেন ৷ অন্যদিকে রাসুলুল্পাহ্ (না) স্বয়ং তায়িফের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন
এবং তারিফ অবরোধ করেন ৷ এ বিষয়ে আলোচনা পরে করা হবে ৷
ইবন ইসহাক বলেন : হুনায়ন যুদ্ধে মুশরিক বাহিনী পরাজিত হওয়ার পর পালিয়ে তায়েফে
চলে আসে ৷ মালিক ইবন আওফ্ও তাদের সাথে ছিল ৷ তবে তাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক
লোক আওতাসে যায় ৷ আর কিছু সংখ্যক যায় নাখলায় ৷ অবশ্য ছাকীফ গোত্রের ওয়াপীরা
উপগােত্রের লোক ব্যতীত আর কেউ নাখলায় যায়নি ৷ যে সব লোক পার্বত্য পথ ধরে তায়েফ
যায়, রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর অশ্বারোহী বাহিনী তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে ৷ এ প্রচেষ্টায় রাৰীআ ইবন
রাফী ইবন ইহান সুলামী দুরায়দ ইবন সিমমাকে ধরে ফেলেন ৷ রাৰীআ ইবন দাগিন্না নামে
প্রসিদ্ধ ছিলেন ৷ দাগিন্না ছিল তার মায়ের নাম ৷ রাৰীআ দৃরায়দের উটের লাগাম টেনে ধরেন ৷ তিনি
ধারণা করেছিলেন যে, উটের আরোহী হবে একজন মহিলা ৷ কেননা, সে কাপড় দিয়ে ঘেরা
হাওদার মধ্যে অবস্থান করছিল ৷ কিন্তু ঘের খুলে ফেলার পর তিনি দেখলেন যে একজন পুরুষ
মানুষ ৷ তিনি উটটিকে বসিয়ে দিলেন ৷ দেখলেন লোকটি জরাগ্রস্ত বৃদ্ধ, দুরায়দ ইবন সিমমা ৷
তরুণ রাৰীআ দুরায়দকে চিনতেন না ৷ দুরায়দ জিজ্ঞেস করলো, তুমি আমাকে কি করতে চাও :
তিনি বললেন, তোমাকে আমি হত্যা করবো ৷ দুরায়দ জানতে চাইল, কে তুমি : তিনি জবাবে
বললেন, আমি রাবীআ ইবন রাফী সুলামী ৷ এরপর তিনি তলোয়ার দ্বারা দুরায়দকে আঘাত
করলেন ৷ কিন্তু তাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হলেন ৷ তখন দুরায়দ বললো, “কত নিকৃষ্ট অস্ত্র দিয়ে
তোমার মা ণ্তামাকে যুদ্ধে পাঠিয়েছে : আমার বাহনে হাওদার পিছনে রাখা ঘেরেব ভেতর থেকে
আমার তলােয়ারটা বের করে আন এবং তা দিয়ে আমাকে আঘাত কর ৷ তবে তুমি অস্থির উপরে
এবং মগত্তেরে নিচে আঘাত করবে ৷ কেননা, আমি এভাবেই লোক হত্যা করতাম ৷ তারপর তুমি
যখন তোমার মায়ের কাছে ফিরে যাবে তখন তাকে বলবে , আমি দুরায়দ ইবন সিমমাকে হত্যা
করেছি ৷ আল্লাহর কসম ! বহুবার আমি তোমাদের মহিলাদেরকে রক্ষা করেছি ৷” পরবর্তীতে বনু
সুলায়মের লোকজন বলেছে যে, রাৰীআ“ জানিয়েছেন, দুরায়দকে আঘাত করার পর সে উলংগ
হয়ে নিচে পড়ে যায় ৷ তখন দেখা যায় তার নিতম্ব ও উরুদ্বয় অধিক অশ্বারােহণ করার ফলে
কাগজের ন্যায় সাদা হয়ে গেছে ৷ এরপর যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে রাৰীআ তার মায়ের নিকট গিয়ে