মাত্র ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) র্তার বাক্যটি বারবার বলছিলেন ৷ এমন কি আমি মনে মনে ইচ্ছা পোষণ
করতে লাপলাম যে, ঐ দিনের ঘটনার আগ পর্যন্ত যদি আমি মুসলমান না হতাম তাহলে কতইনা
ভাল হত ৷ এ হাদীছটি প্রয়োজনীয় মন্তব্য ও ব্যাথ্যাসহ পুর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ৷
এরপর ইমাম বুখারী (র ) সালামা ইবনুল আকওয়া (রা)-এর বরাতে হাদীছ উল্লেখ করে
বলেন যে, তিনি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সাথে সাতটি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছি ৷ আর
যেসব জায়গায় রাসুলুল্লাহ্ (সা) গমন না করে সৈন্যদল প্রেরণ করেছেন এরুপ নয়টি অভিযানে
আমি অংশ নিয়েছি ৷ কোন কোন সময় আবু বকর (রা) ছিলেন আমাদের আমীর ৷ আবার কোন
কোন সময় উসামা (রা) ছিলেন আমাদের আমীর ৷
এরপর বায়হাকী হাবশার শাসনকর্তা নাজ্জাশীর মুসলমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ, তার মৃত্যু
সম্পর্কে মুসলমানদের কাছে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সংবাদ পরিবেশন ও তার জানাযার সালাত
আদায়ের ঘটনা উল্লেখ করেন ৷ আবু হুরায়রা (রা)-এব বরাতে তিনি বলেন, যেদিন নাজ্জাশী
ইনতিকাল করেন, সেদিন রাসুলুল্লাহ্ (না)-তীর মৃত্যু সংবাদ পরিবেশন করেন এবং
মুসলমানদেরকে নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন ও চার তাকবীরসহ তার জানাযার সালাত আদায়
করেন ৷ বুখারী এবং মুসলিম আবু হুরায়রা (রা)-এর বরাতে অনুরুপ হাদীছ বর্ণনা করেন ৷ বুখড়ারী
ও মুসলিম জাবির (রা)-এর বরাতে বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন, আজকে একজন
পুণ্যবান ব্যক্তি ইনতিকাল করেছেন ৷ তোমরা আশৃহামার (নাজ্জাশীর শাসনকর্তা) জানাযার সালাতে
অংশ গ্রহণ কর ৷ এ হাদীছটি পুর্বেই বর্ণনা করা হয়েছে ৷
বলবােহুল্য যে, মক্কা বিজয়ের বহু পুর্বেই নজােশী ইনতিকাল করেছিলেন ৷ সহীহ্ ঘুসলিমে
একটি বর্ণনা আছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন রাজা বাদশাহদের কাছে পত্র লিখেছিলেন তখন
নাজ্জাশীর কাছেও একটি পত্র দিয়েছিলেন ৷ সে নাজ্জাশী মুসলমান ছিলেন না ৷ অবশ্য ওয়াকিদী
প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে, তিনি তখন মুসলমান ছিলেন ৷ আল্লাহ্ তাআলাই অধিক
পরিজ্ঞাত ৷
বায়হাকী উম্মে কুলসুম (বা) হতে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন
উম্মে সালামা (রা)-কে বিবাহ করেন তখন উম্মে সালামা নাজ্জাশীর কাছে কিছু পরিমাণ মিশৃক ও
একজােড়া কাপড় হাদিয়া স্বরুপ পাঠান ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আমার ধারণা, নাজ্জাশী মৃত্যু
বরণ করেছেন ৷ এবং তার কাছে প্রেরিত হাদিয়া অচিরেই ফেরত আসবে ৷ এরপর এগুলো আমি
তোমাদের মধ্যে বণ্টন করব অথবা তোমাকে দিয়ে দেব ৷ রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যা
বলেছিলেন, বাস্তবে তাই ঘটল ৷ নাজ্জাশী ইনতিকাল করেন তাই হাদিয়াও ফেরত আসে ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার এক সহধ্র্মিণীকে কিছু পরিমাণ মিশৃক দান করলেন, কাপড় জোড়াসহ বাকী
সবটাও উম্মে সালামাকে দিয়ে দিলেন ৷ আল্লাহ্ই অধিক পরিজ্ঞাত ৷
বিজয়ের শ্রেষ্ঠ ঘটনা : মক্কা বিজয়
অষ্টম হিজরীর রামাযান মাস
আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন ও
অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের পুর্বে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে তারা এবং
পরবর্তীরা সমান নয় ; তারা মর্যাদার শ্রেষ্ঠ অন্যদের অপেক্ষা যারা পরবর্তীকালে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ
করেছে ৷ তবে আল্লাহ্ উভয়ের জন্য কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ৷” ( ৫ ৭ হাদীদ : ১০)
আল্পাহ্ তাআলা আরো ইরশাদ করেন :
অর্থাৎ যখন আসবে আল্লাহ্র সাহায্য ও বিজয় এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহ্র দীনে
প্রবেশ করতে দেখবে তখন তুমি তোমার প্ৰতিপালকের প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা ও মহিমা
ঘোষণা করবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করবে ৷ তিনি তো তাওবা কবুলকাবী ( ১ ১ : নাসর : ১-৫)
হুদায়বিয়ার পর অনুষ্ঠিত মহা বিজয়ের কারণ সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে ইবন ইসহাক
মিসওয়ার ইবন মাখরামা (রা) ও মারওয়ান ইবনুল হাকাম (বা) হতে বর্ণনা করেন ৷ তারা দুজনেই
বলেন, হুদায়বিয়ার সন্ধির একটি শর্ত ছিল কেউ ইচ্ছা করলে সন্ধিতে মুহাম্মাদ (সা) এর পক্ষ
নিতে পারে ৷ আবার যে কেউ ইচ্ছা করলে সন্ধিতে কুরায়শদের পক্ষ ও অবলম্বন করতে পারে ৷
বনু খুযাআর লোকজন বলল, আমরা সন্ধিতে মুহাম্মাদ (সা ) এর পক্ষ অবলম্বন করছি ৷ অন্যদিকে
বনু বকর বলল, আমরা সন্ধিতে কুরায়শদের পক্ষ অবলম্বন করছি ৷ উপরোক্ত সন্ধি তারা সতের
কিৎবা আঠার মাস পর্যন্ত মেনে চলে ৷ তারপর বনু বকর মক্কার নিকটবর্তী ওয়াভীর নামক
জলাশয়ের নিকট রাতের বেলায় বনু খুযাআর উপর আক্রমণ চালায় ৷ কুরায়শরা ডাবল যে,
মুহাম্মাদ (সা) আমাদের সম্পর্কে জানতে পারবেনা, কেননা, এটা রাতের ঘটনা তাই আমাদেরকে
কেউ দেখতে পাচ্ছে না ৷ সুতরাং কুরায়শরা বনু বকরের সােকদেরকে অস্ত্রশস্ত্র ও বাহন দিয়ে সাহ-
ায্য করল এবং রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সাথে বৈরিতাবশত তারা হত্যাকান্ডে যোগ দিল ৷ ওয়ড়াতীরে
বনু খুষাআ ও বনুবকরের মধ্যে সং টিত ঘটনার পর আমর ইবন সালিম মদীনায় রওয়ানা হলেন
এবং রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে পৌছে যাবতীয় সংবাদ জানালেন ৷ তিনি এ সম্পর্কে কয়েকটি
পংক্তি রচনা করেন এবং রাসুলুল্পাহ্ (না)-এর কাছে আগমন করে তিনি এগুলো তাকে আবৃত্তি
করে শুনালেন :
হে আমার রব্ব আমি মুহাম্মাদ (সা)-ক্লে তার ও আমাদের মহা সম্মানিত পিতৃপুরুষদের
ওয়াদা ত্র্গীকার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি ৷ আপনারা ছিলেন আমাদের সন্তানতুল্য আর আমরা ছিলাম
আপনাদের পিতৃতুল্য ৷ আমরা এরপর ইসলাম গ্রহণ করেছি ৷ আমরা ইসলাম হতে আমাদের হাত
গুঢিয়েও নেইনি ৷ সুতরাং হে আল্লাহ্র রাসুল ! আমাদের সাহায্য করুন ৷ হে আল্লাহ্র রাসুল ! আমা
দেরকে সাহায্য করুন এবং আমাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতে আল্লাহ্র বন্দোদেরকে আহ্বান
করুন ৷ আল্লাহ্র বান্দাদের মধ্যেই আল্পাহ্র রাসুল রয়েছেন ৷ কিন্তু তিনি তাদের মধ্যে অনন্য
ব্যক্তিত্বের অধিকারী ৷ অন্যায় দেখলে তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায় ৷ তখন তিনি বিশাল সেনাবাহিনী
নিয়ে ফেনিলযুক্ত প্রবহমান সাগরের ন্যায় এগিয়ে যান ৷ হে নবী ! কুরড়ায়শরা আপনার সাথে ওয়াদা
খেলাফ করেছে ৷ তোমার সাথে কৃত মযবুত ওয়াদা তারা ভঙ্গ করেছে ৷ আমাকে হত্যা করার
জন্যে তারা কাদা অঞ্চলে ওৎ পেতে রয়েছে এবং তারা মনে করে যে, আমি কাউকে সাহায্যের
জন্যে পাব না ৷ প্রকৃতপক্ষে তারাই অবমানিত ও সংখ্যায় মুষ্টিমেয় ৷ দুশমনেরা ওয়াতীর জণাশয়ের
নিকট বিফ্লি রজনী যাপন করেছে ও আমাদেরকে রুকু-সিজদারত অবস্থায় হত্যা করেছে ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেন, হে আমর ইবন সালিম আমি অবশ্যই তােমাদেরকে সাহায্য করব ৷
এমন সময় আসমাংন একখণ্ড মেঘ দেখা গেল যা মাথার উপর দিয়ে চলে গেল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বললেন, এমনকি এই যেঘখণ্ডও অবশ্যই বনু কাবের সাহায্য ঘোষণা করছে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
সােকজনকে যুদ্ধের তৈরীর হুকুম দেন ; কিন্তু কোথায় অভিযান পরিচালনা করবেন তা তাদের
কাছে গোপন রাখেন এবং আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করেন যেন কুরায়শদের কাছে এ খরবটি প্রকাশ
না পায় যাতে আকস্মিকভাবে তাদের জনপদে আক্রমণ করা যায় ৷
ইবন ইসহাক বলেন, তাদের আক্রান্ত হবার কারণ ছিল এই যে, আসওয়াদ ইবন বিমানের
মিত্র মালিক ইবন আব্বাদ নামক বনু হাদরামীর এক ব্যক্তি ব্যবসার জন্যে ঘর থেকে বের হয়ে
যখন খুযাআ গোত্রের এলাকায় পৌছে তখন তারা তার উপর হামলা করে তাকে হত্যা করে ও
তার মালপত্র হস্তপত করে নেয় ৷ তাই বনু বকর ও বনু খুযাআর এক ব্যক্তির উপর হামলা করে
তাকে হত্যা করে ৷ এরপর ইসলামের পুর্বে বনু খুযাআও আসওয়াদ ইবন রিযান আদ-দায়লীর
পুত্রদের উপর হামলা করে ৷ তারা ছিলেন সালামা, কুলসুম ও যুওয়ইিব ৷ আর তারা ছিলেন বনু
কিনানার খুবই গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ৷ তাদেরকে আরাফাতের হারমের সীমানা স্তম্ভগুলোর সামনেই
হত্যা করা হয় ৷ ইবন ইসহাক বলেন, দায়লি গোত্রের এক ব্যক্তি বর্ণনা করে যে, জাহেলিয়াতের
যুগে আমাদের একটি রক্তপণের পরিবর্তে রনুআসওয়াদ ইবন রিযান দুইটি রক্তপণ আদায় করত ৷
বনু বকর ও বনু খুযাআর বিরোধপুর্ণ এরুপ অবস্থায় ইসলামের আবির্ভাব হয় ৷ যখন হদায়বিয়ার
সন্ধি সংঘটিত হয় তখন বনু বকর কুরায়শদের পক্ষে যোগ <:দয় এবং বনু খুযাআ রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর পক্ষে যোগ দেয় ৷
বনু বকরের একটি অংশ বনু দায়ল হদায়বিয়ার সন্ধিরকড়ালে বনু খুযাআর লোকদের থেকে
প্রতিশোধ নিতে মনস্থ করে ৷ বনুদায়লের সর্দার নওফল ইবন মুআবিয়া আদ-দায়লী আল-ওয়াতীর
জলাশয়ের নিকট বনু খুযাআর উপর রাতের বেলা হামলা করে তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে
ও অন্যদের লুটপাট করে ৷ বনু বকরের লোকেরা তাদের সাহায্য করে এমনকি কুরায়শরাও অস্ত্র
দিয়ে তাদের সাহায্য করে ৷ কুরায়শরা রাতের বেলায় গোপনে তাদের সাথে এ আক্রমণে
অংশ্যাহণ করে , এমনকি বনু খুযাআকে হারাম শরীফে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে ৷ বনু বকরের
সর্দারকে অন্যান্য সদস্যরা বলতে লাগল আমরা হেরেমে এসে গেছি, তোমাদের সামনে
তোমাদের উপাস্য, থেমে যাও ৷ তখন তাদের সর্দার বিজয়ের জোশে একটি জঘন্য কথা বলে
ফেলে, সে বলল, হে বনু বকর, আজকের দিয়ে কোন উপাস্য নেই ৷ আজ প্রতিশো ধ নেবার দিন ৷
তোমরা হারমে চুরি করতে পার আর প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারবে না ? শেষ পর্যন্ত বনু খুযাআ
মক্কায় অবস্থিত বুদায়ল ইবন ওরাকার ঘরে ও তাদের অড়াযাদকৃত গোলাম রাফি“র ঘরে আশ্রয় গ্রহণ
করে ৷ এই অবস্থার বর্ণনা দিয়ে অড়াখযার ইবন লাত আদ-দায়লী কবিতার ছন্দে বলেন :
“কুরায়শের দুরবর্তী লোকেরা কি সংবাদ পায়নি যে, আমরা বনুকাবকে বর্শাফলকের উপরিভাগের
আঘাতে আঘাতে কুয়ার স্থান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি এবং গোলাম রাফি এর ঘরে তাদেরকে
অবরুদ্ধ করেছি ? আর কিছুক্ষণের জন্যে নেতা বুদায়লের ঘরেও তাদেরকে অবরোধ করা
হয়েছে ৷ তাদের কিছু সংখ্যক লোককে বর্শা পতিত হওয়ার স্থানে হত্যা করে আমাদের মনের
ঝাল মিঢিয়েছি ৷ তাদের অবশিষ্টদেরকে অত্যাচারী ও নিতান্তহীন ব্যক্তির ঘরে আমরা অবরোধ
করে রেখেছি ৷ তাদের অবরোধ দীর্যায়িত হল তখন আমরা ধ্বনি দিতে লাপলাম যাতে প্রতিটি
গোত্র থেকে বহু সংখ্যক লোক তাদের গোচনীয় অবস্থা দেখার জন্যে জমায়েত হতে পারে ৷
আমরা তাদেরকে তলােয়ার দিয়ে যবাই করেছিলাম যেমন সিংহকুল বকরীগুলেড়াকে তাদের নখর
দিয়ে খন্ডবিখন্ড করে ফেলে ৷ তারা আমাদের প্রতি যুলুম করেছে, তাদের কর্মকান্ডে তারা
সীমালংঘন করেছে ৷ আর হারমের পাথর ফলকগুলোর সম্মুখে ছিল তাদের প্রথম ঘাতক ব্যক্তিটি ৷