আওতাস যুদ্ধ
আওতাস যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার কারণ ছিল এই যে, হাওয়াযিন সম্প্রদায় পরাজয় বরণ করার
পর তাদের এক দল তায়েফে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে ৷ তাদের মধ্যে দলপতি মালিক ইবন আওফ
নাসয়ীও ছিল ৷ তায়েফের দুর্গের অভ্যন্তরে তারা অবস্থান নেয় ৷ আর এক দল লোক আওতাস
নামক স্থানে গিয়ে সমবেত হয় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) আবু আমির আশআরী ( রা)-এর নেতৃত্বে এক
দল সাহাবীর একটি বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন ৷ মুসলিম বাহিনী যুদ্ধ করে তাদেরকে
পরাজিত করেন ৷ অন্যদিকে রাসুলুল্পাহ্ (না) স্বয়ং তায়িফের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন
এবং তারিফ অবরোধ করেন ৷ এ বিষয়ে আলোচনা পরে করা হবে ৷
ইবন ইসহাক বলেন : হুনায়ন যুদ্ধে মুশরিক বাহিনী পরাজিত হওয়ার পর পালিয়ে তায়েফে
চলে আসে ৷ মালিক ইবন আওফ্ও তাদের সাথে ছিল ৷ তবে তাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক
লোক আওতাসে যায় ৷ আর কিছু সংখ্যক যায় নাখলায় ৷ অবশ্য ছাকীফ গোত্রের ওয়াপীরা
উপগােত্রের লোক ব্যতীত আর কেউ নাখলায় যায়নি ৷ যে সব লোক পার্বত্য পথ ধরে তায়েফ
যায়, রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর অশ্বারোহী বাহিনী তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে ৷ এ প্রচেষ্টায় রাৰীআ ইবন
রাফী ইবন ইহান সুলামী দুরায়দ ইবন সিমমাকে ধরে ফেলেন ৷ রাৰীআ ইবন দাগিন্না নামে
প্রসিদ্ধ ছিলেন ৷ দাগিন্না ছিল তার মায়ের নাম ৷ রাৰীআ দৃরায়দের উটের লাগাম টেনে ধরেন ৷ তিনি
ধারণা করেছিলেন যে, উটের আরোহী হবে একজন মহিলা ৷ কেননা, সে কাপড় দিয়ে ঘেরা
হাওদার মধ্যে অবস্থান করছিল ৷ কিন্তু ঘের খুলে ফেলার পর তিনি দেখলেন যে একজন পুরুষ
মানুষ ৷ তিনি উটটিকে বসিয়ে দিলেন ৷ দেখলেন লোকটি জরাগ্রস্ত বৃদ্ধ, দুরায়দ ইবন সিমমা ৷
তরুণ রাৰীআ দুরায়দকে চিনতেন না ৷ দুরায়দ জিজ্ঞেস করলো, তুমি আমাকে কি করতে চাও :
তিনি বললেন, তোমাকে আমি হত্যা করবো ৷ দুরায়দ জানতে চাইল, কে তুমি : তিনি জবাবে
বললেন, আমি রাবীআ ইবন রাফী সুলামী ৷ এরপর তিনি তলোয়ার দ্বারা দুরায়দকে আঘাত
করলেন ৷ কিন্তু তাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হলেন ৷ তখন দুরায়দ বললো, “কত নিকৃষ্ট অস্ত্র দিয়ে
তোমার মা ণ্তামাকে যুদ্ধে পাঠিয়েছে : আমার বাহনে হাওদার পিছনে রাখা ঘেরেব ভেতর থেকে
আমার তলােয়ারটা বের করে আন এবং তা দিয়ে আমাকে আঘাত কর ৷ তবে তুমি অস্থির উপরে
এবং মগত্তেরে নিচে আঘাত করবে ৷ কেননা, আমি এভাবেই লোক হত্যা করতাম ৷ তারপর তুমি
যখন তোমার মায়ের কাছে ফিরে যাবে তখন তাকে বলবে , আমি দুরায়দ ইবন সিমমাকে হত্যা
করেছি ৷ আল্লাহর কসম ! বহুবার আমি তোমাদের মহিলাদেরকে রক্ষা করেছি ৷” পরবর্তীতে বনু
সুলায়মের লোকজন বলেছে যে, রাৰীআ“ জানিয়েছেন, দুরায়দকে আঘাত করার পর সে উলংগ
হয়ে নিচে পড়ে যায় ৷ তখন দেখা যায় তার নিতম্ব ও উরুদ্বয় অধিক অশ্বারােহণ করার ফলে
কাগজের ন্যায় সাদা হয়ে গেছে ৷ এরপর যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে রাৰীআ তার মায়ের নিকট গিয়ে
দৃরায়দকে হত্যা করার বিবরণ শুনায় ৷ বর্ণনা শুনে তার মা বললেন ৷ “আল্লাহর কসম ! সে তো
তোমার মাদেরকে তিন তিনবার যুক্ত করেছিল ৷”
দৃরায়দ নিহত হওয়ার পর তার কন্যা উমারা বিনৃত দৃরায়দ যে শোক পথাে রচনা করেছিল,
ইবন ইসহাক তা উল্লেখ করেছেন ৷ তার কিছু অংশ নিম্নে দেওয়া হল ও
“তারা বলেছে, আমরা দৃরায়দকে হত্যা করেছি ৷ আমি বলেছি, তারা সত্য কথাই বলেছে ৷
ফলে আমার অশ্রু অবিরতভাবে আমার আমার উপর ঝরে পড়ছে ৷
যদি ঐ শক্তি বিদ্যমান না থাকতো যা সষুদয় জাতিকে গ্রাস করে নিয়েছে, তা হলে বনু
সুলায়ম ও বনু কা ’ব দেখতাে, কিভাবে হুকুম মান্য করা হয় ও আনুগত্য করতে হয় ৷
তখন প্রাতঃকালে তাদেরকে আঘাত হানতাে প্রকাশ্যে ও অপ্ৰকাশ্যে এক বিরাট বিশাল
বাহিনী ৷ তখন বিপদ মুসীবত স্থায়ীভাবে তাদের ঘাড়ে চেপে বসতাে ৷ ”
ইবন ইসহাক বলেন : যুশরিক বাহিনীর মধ্য হতে যারা আওতাসের দিকে পালিয়ে গিয়েছিল
তাদের পশ্চাদ্বাবন করার জন্যে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আবু আমির আশআরীকে প্রেরণ করেন ৷ তিনি
পরাজিতদের মধ্যেকার কিছু লোকের নাপাল পেয়ে যান ৷ দুর থেকে উভয় দলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু
হয় ৷ একটি তীর এসে আবু আমির (রা)-এর গায়ে পতিত হয় এবং তাতেই তিনি শহীদ হন ৷
তারপর তার চাচাত ভাই আবুমুসা আশআরী (রা) পতাকা ধারণ পুর্বক তাদের বিরুদ্ধে লড়ইিয়ে
অবতীর্ণ হন ৷ আল্লাহ্ তাকে এ লড়াইয়ে বিজয় দান করেন এবং শত্রুদেরকে পরাজিত করেন ৷
ণ্লাকমুখে জানা যায় যে, যে ব্যক্তি আবু আমির আশআরী (রা) কে তীরবিদ্ধ করেছিল যে হল
দুরায়দের পুত্র সালামা ৷ তার নিক্ষিপ্ত তীর আবু আমিরের হীটুতে লাগে এবং এতেই তিনি নিহত
হন ৷ এ প্ৰসংগে সালামা কবিতায় বলে :
“আমার সম্পর্কে যদি জানতে চাও, তা হলে শুনে নাও আমার নাম সালামা ৷ আমি
সামাদীরের পুত্র ৷ এ পরিচয় তার জন্যে দেওয়া যে তাকে ভালরুপে জানতে চায় ৷ আমি
মুসলমানদের মাথায় তলােয়ারের আঘাত হানি ৷
ইবন ইসহাক বলেন : কবিতা ও ঘটনা বর্ণনায় পারদর্শী জনৈক নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি আমার
নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আওতাসের দিন দশজন মুশরিকের সাথে আবু আমির (রা)-এর
মুকাবিলা হয় ৷ এ দশজনই ছিল পরস্পরের ভাই ৷ তাদের মধ্যে একজন আবুআমিরের উপর
হামলা করে ৷ ফলে আবু আমির (রা) ও তার উপর হামলা করেন ৷ তিনি তাকে ইসলাম গ্রহণ
করার জন্যে দাওয়াত দেন এবং বলেন, “হে আল্লাহ্ ! আপনি তার উপর সাক্ষী থাকুন ৷” তারপর
আবু আমির (রা) তাকে হত্যা করেন ৷ এরপর দ্বিতীয় আর একজন তাকে আক্রমণ করে ৷ ফলে
আবু আমির (রা) তাকে ইসলামের দিকে আহ্বান করে বলেন, “হে আল্লাহ ! আপনি সাক্ষী
থাকুন ৷“ তারপর প্রতি-আক্রমণ করে আবু আমির (রা) তাকে হত্যা করেন ৷ এরপর তারা
প্রতেব্রকেই একে একে আবু আমির (রা)-এর উপর হামলা করতে থাকে ৷ আর প্রতেকে বারেই
তিনি অনুরুপ দাওয়াত দিয়ে ও আল্পাহ্কে সাক্ষী রেখে প্ৰতি-হামলা করে হত্যা করতে থাকেন ৷
এভাবে তাদের নয়জন নিহত হয়ে যায় ৷ বাকী থাকে দশম ব্যক্তি এবার সেও আবু আমির (রা)
-এর উপর হামলা করে বসে ৷ ফলে তিনিও তার উপর হামলা করেন ৷ তিনি তাকে প্রথমে
ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেন এবং বলেন “হে আল্লাহ ! আপনি সাক্ষী থাকুন ৷” তখন
আক্রমণকারী দশম লোকটি বললােষ্ হে আল্লাহ্ ! আপনি আমার উপরে সাক্ষী থাকবেন না ৷ এ
কথা শুনে আবু আমির (রা) তাকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকেন ৷ ফলে সে প্রাণে রক্ষা পায় ৷
পরে সে ইসলাম গ্রহণ করে এবং অতি নিষ্ঠার সাথে ইসলামের আনুগত্য করে ৷ নবী করীম (সা)
যখনই তাকে দেখতেন তখনই বলাতন, এ হচ্ছে আবু আমিরকে ফীকি দেওয়া পলাতক ব্যক্তি ৷
বর্ণনাকারী বলেন, অল্পক্ষণ পর বনু জুশাম ইবন মুআবিয়া গোত্রের হারিছের দুই পুত্র আলা ও
আওফা (দুই ভাই) একযোগে আবু আমির (রা)-এর প্রতি তীর নিক্ষেপ করে ৷ একটি তীর তার
হৃৎপিণ্ডে লাগে এবং অপরটি তার হীটুতে বিদ্ধ হয় ৷ এভাবে তারা দৃজনে মিলে তড়াকে শহীদ
করে ৷ এ সময় লোকজন আবু মুসা আশআরীকে তার স্থানে আমীররুপে গ্রহণ করে ৷ তিনি
আক্রমণকারী ভ্রাতৃদ্বয়ের উপর পালটা আক্রমণ চালিয়ে তাদের দৃজনকেই হত্যা করেন ৷ বনু
জুশাম গোত্রের এক ব্যক্তি উক্ত ভ্রাতৃদ্বয়ের মৃত্যুতে নিম্নরুপ মর্সিয়া রচনা করেন :
আনা ও আওফার হত্যাকাণ্ড একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ৷ তারা এক সাথেই মারা গেল,
অথচ কোন আশ্রয়ই তাদের ছিল না ৷
তারা দৃ’জনেই আবুআমিরের হভ্যাকারী ৷ আর আবু আমির ছিল এক ভয়ংকর ব্যক্তি ৷
তারা দুজনে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে এমন অবস্থায় পরিত্যাগ করে, যেন তার পার্শে রয়েছে
মসজিদ ৷
মানব সমাজে তাদের দু’ভাইয়ের ন্যায় লোক কোথাও দেখা যায়না ৷ প্রতিযোগিতায় তারা
কমই হেড়াচট খায় ৷ আর তীর নিক্ষেপে তারা খুবই সিদ্ধহস্ত ৷”
ইমাম বুখারী মুহাম্মাদ ইবন আলা আবু মুসা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেন, হুনায়ন যুদ্ধ শেষ করার পর রাসুলুল্লাহ্ (সা) আবু আমির (রা)-এর নেতৃত্বে একটি সৈন্য
দল আওতাস গোত্রের দিকে পাঠান ৷ দৃরায়দ ইবন সিমমার সাথে তার মুকাবিলা হয় ৷ লড়াইয়ে